চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
‘নারী ও বালিকাদের ক্ষমতায়ন, হোক না তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’- প্রতিপাদ্যের মধ্যদিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এবার ২ এপ্রিল ১১তম ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুরা সমাজের বোঝা নয়। এদের সুপ্ত প্রতিভা আছে। তাদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলে তারা আমাদের সম্পদ হবে। তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, সুস্থরা পারে না, কিন্তু প্রতিবন্ধীরা আমাদের অলিম্পিকের স্বর্ণ এনে দেয়। তাই তারা আমাদের সম্পদ। তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের কাজ।
গত (সোমবার) সকালে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে সুস্থ্য মেয়ে হলেই অনেক বাবা মা বোঝা মনে করে। আর প্রতিবন্ধী বা অটিজম শিশু হলে তো কোনো কথাই নাই। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হলে দোষ দেয়া হয় স্ত্রীকে, যেন সব দোষ তার। তিনি বলেন, আল্লাহ সবাইকে সমানভাবে তৈরি করেন না। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সকলেরই সদয় হতে হবে। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলে তারাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবাদান রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের বিষয়ে এখন সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘও এখন এ বিষয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এসব শিশুদের জন্য। তারা যেন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করছি।
অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনতে পারে। প্রতিবন্ধী, অটিস্টিকসহ পিছিয়ে থাকা মানুষের সেবা করা অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। সমাজে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থায় প্রতিবন্ধিতা এখন আর কোনো সমস্যা নয়। সমাজের আর ১০ জন মানুষের মতোই তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। সেজন্য তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা এবং সক্ষমতার নিরিখে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক, চিকিৎসা এবং শিক্ষা সহায়তা দেয়া জরুরি। প্রতিটি স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা হলে তারা আর ১০টা স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে মিশে শিক্ষা লাভ করে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবে। এছাড়া রাস্তা-ঘাট, ফুটপাত এবং নতুন অবকাঠামো যেখানেই হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধীদের সহজে চলাচলের জন্য পৃথক লেন করতে হবে।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। এদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উন্নয়নের মূলস্রোত ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধীরা যাতে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হয়- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
এইচআর/জেআইএম