অপূরণীয় ক্ষতি, দায় নেবে কে?

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৮

যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে দিন দিন তা বাড়ছে বৈ কমছে না। বর্ষা মৌসুমে রাজধানী প্রায় স্থবির হয়ে থাকছে। থেমে চলছে সব ধরনের যানবাহন। মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের সহসা কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। উন্নয়ন অগ্রগতিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে অচল রেখে কোনো উন্নয়নই আখেরে গতি পাবে না। উন্নয়ন অগ্রগতির সর্বাগ্রে রাখা উচিত যানজটমুক্ত সচল ঢাকার মহাপরিকল্পনা।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কম হলো না। অটো সিগন্যাল বাতি লাগানো হল। কদিন পরই সব নষ্ট। আবার ম্যানুয়াল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামে আর চলে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জ্যামে পড়লে সবারই একই দশা। যদিও গুরুত্বভেদে জরুরি ভিত্তিতে কিছু গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু রাস্তা তো একই। কিভাবে চলবে? ব্যতিক্রম দেখা যায় শুধু ভিআইপি, ও ভিভিআইপিদের বেলায়। তখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তেই। আর এর জের টানতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ যানজটে আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এই চাপ আবার কাজ করছে অন্যান্য রোগের উৎস হিসেবে। পাশাপাশি যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য।

গত শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট: আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বৈঠকের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

ট্রাফিক মোড়গুলো শহরের বিষফোড়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সড়কে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাতের অবৈধ দখল, ভাসমান বিক্রেতাদের সড়ক দখল, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে যাওয়া অন্যতম। তা ছাড়া দুই শতাধিক কোম্পানির অধীনে শহরের বাস সেবা পরিচালিত হওয়ার ফলে যাত্রী ওঠানো নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতাও যানজটের অন্যতম কারণ।

যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শরীরের সকল মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয় তেমনি রাজধানীতেই সবকিছু করার নামও উন্নয়ন নয়। যানজটে জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছুর। এটি আমাদের নীতি নির্ধারকরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গলজনক হবে।

এইচআর/পিআর

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।