মশক নিধনে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, ২১ মার্চ ২০১৮

মশার উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ থাকলেও সে অনুযায়ী মশক নিধনে নেই দুই সিটি কর্পোরেশেনের তেমন কোনো কার্যক্রম। তাই মশা নিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও। তাই মশক নিধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

নগরবাসীরা বলছেন অন্য সময়ের চেয়ে মশার উপদ্রব খুব বেড়েছে। দিনেও মশার হাত থেকে রেহাই নেই। অন্যদিকে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা-জানালা সব বন্ধ করে বদ্ধভাবে থাকতে হয়। অথচ মশক নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়- মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবেলা মশা নিধনে বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। মশক নিধনকারী কর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না।

মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) চলতি অর্থবছরে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিধনে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ডিএসসিসিতে মশার ওষুধ ছিটানোর ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে হস্তচালিত, ফগার ও হুইল ব্যারো মেশিন কিন্তু অর্ধেক মেশিনই প্রায় অচল রয়েছে। অন্যদিকে ডিএনসিসিতে হস্তচালিত, ফগার, হুইল ব্যারো, ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মেশিন মিলিয়ে মশা নিধনের মেশিন রয়েছে ৬৫৩টি। এর মধ্যেও প্রায় অর্ধেক নষ্ট। সব মিলিয়ে রাজধানীর মশা নিধনে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন। যা দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) আওতাধীন যেসব বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র কিংবা লার্ভা পাওয়া যাবে, ওইসব বাসার মালিককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ডিএসসিসির এই অভিযান। সোমবার নগর ভবনের আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জনান তিনি। ‘স্বচ্ছ ঢাকা’ কর্মসূচির আওতায় চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এবং এডিস মশক নিধনে করণীয় নির্ধারণে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মেয়র বলেন, আমরা আগামীকাল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবো। সব নাগরিক যেন তার বাসা পরিচ্ছন্ন রাখেন। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো আমরা। তিনি বলেন, যেসব ভবনে এডিসের প্রজনন ক্ষেত্র কিংবা লার্ভা পাওয়া যাবে, ওইসব বাসার মালিককে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ডিএসসিসির আইন ২৬৯-৭০ অনুযায়ী এই জরিমানা করা হবে। আমরা সবাইকে নোটিশ দেব। আপনারা নাগরিকরা অনুগ্রহ করে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখবেন।

মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এবার জনসাধারণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ডিএনসিসি একটি হটলাইন চালু করেছে। হটলাইন নম্বরটি হচ্ছে ০১৯৩২-৬৬৫৫৪৪। ডিএনসিসির আওতাধীন যে কোনো এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সেবা চালু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই নম্বরে যে কেউ কল করতে পারবেন। এ নম্বরে ফোন দিলে মশক নিধনকর্মী পৌঁছে যাবে আপনার এলাকায়। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই স্থানে মশার ওষুধ ছিটাবে। কার্যক্ষেত্রেও যেন এর প্রতিফলন দেখা যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

মশা শুধু দুর্ভোগই সৃষ্টি করেনা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসহ বিভিন্ন মরণঘাতি রোগের জীবাণুও বহন করে মশা। এজন্য মশার উপদ্রব বন্ধ করতে হবে। এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

বিশেষ করে এডিস মশার সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি না পায় এ লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। বাসাবাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি-ফ্রিজ থেকে জমা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি ঘটে। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

মশক নিধন নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা বা শৈথিল্য মেনে নেওয়া যায় না। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নানা সময় মশক নিধনের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হয় না। দিন দিন রাজধানীতে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। মশক নিধনে তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। অথচ এ জন্য বাজেট রয়েছে। রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক।

এইচআর/পিআর

মশা শুধু দুর্ভোগই সৃষ্টি করেনা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসহ বিভিন্ন মরণঘাতি রোগের জীবাণুও বহন করে মশা। এজন্য মশার উপদ্রব বন্ধ করতে হবে। এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।