বিশ্ব নিদ্রা দিবস ও ঘুমের গুরুত্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, ১৬ মার্চ ২০১৮

আধুনিক সভ্যতায় ব্যস্ত মানুষ ঘুমের প্রয়োজনীয়তাকে খাটো করে দেখছে। অথচ ঘুম শরীরবৃত্তীয় চক্রের মৌলিক অংশ। আর তাই নিদ্রাজনিত সমস্যা এবং এর জটিলতার বিষয়ে অবহিত এবং সচেতন করার জন্য এ বছর ১৬ মার্চ বিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব নিদ্রা দিবস’। সুনিদ্রার গুরুত্ব বোঝাতে ২০০৮ সালের মার্চ মাস থেকে সারা বিশ্বে ঘুম দিবস পালন শুরু হয়।

এবারে এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্রশান্তির ঘুম ছন্দময় জীবন’। অর্থাৎ আপনি চাইলেই সহজেই অনিদ্রার কারণ জেনে তার চিকিৎসা নিয়ে সুখের ঘুম ঘুমাতে পারেন। বৈশ্বিক নিদ্রা সঙ্কটে ভুগছে পৃথিবী।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অন্তত ১০০ মিলিয়ন মানুষের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। বিশ্বের ৮ শতাংশ মানুষ নিদ্রাজনিত রোগ এবং নাক ডাকা সমস্যায় আক্রান্ত। এছাড়া ২২ মিলিয়ন আমেরিকান নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন। ঘুমের সমস্যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই হতে পারে। বয়সভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এডিনয়েড ও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। বড়দের বেলায় নাকের হাড় বাঁকা, বড় আকারের টনসিল, নাকের পলিপ এবং সর্বোপরি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এর মূল কারণ।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ ঘুম কম হওয়ার বিষয়টি সরাসরি বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে মুখ হা করে ঘুমানো কিংবা নাক ডাকাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন। উল্টো নাক ডেকে ঘুমানোকে অধিকাংশ লোকজন গভীর ঘুম বলে মনে করেন। সাধারণের এ ধারণার উল্টোটাই সত্যি। নাক ডাকা কখনই স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়। যারা নাক ডাকেন তাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ বা শ্বাসবন্ধ হওয়ার ঘটনা থাকে। এই দমবন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়মিতভাবে অল্প সময়ের জন্য হতে থাকে। কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা না করলে হতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা।

সূচনাতে সেই সমস্যা সাধারণত শারীরিক অস্বস্তি দিয়ে শুরু হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্টের সমস্যায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে। আর আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। এর বাইরেও এ কারণে কমে যায় উদ্যম, কর্মস্পৃহা। সাধারণভাবে এই স্বাস্থ্য সমস্যার নাম ওএসএ (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া) অর্থাৎ নিদ্রাকালীন শ্বাসবদ্ধতা। এ ধরনের সমস্যায় রোগীর রাত্রিকালীন নিয়মিত ঘুম ভালো বা পর্যাপ্ত হয় না, ফলে সারাদিন ঘুমকাতুরে চোখ নিয়ে ঝিমুনিতে কাটে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যে সমস্যাগুলোর মানুষ দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হতে পারে তার মধ্যে মাথা ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, সব সময় ক্লান্তি ভোগ করা, অবসাদগ্রস্ত থাকা, একাকীত্ব বোধ করা অন্যতম। সুতরাং প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন। কতদিন ধরে আপনার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে? কবে আপনি শেষ শান্তি মতো ঘুমিয়েছেন? এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য অনেক প্রশ্নই চলে আসে। আপনি কি কোনো বিষয়ে অনেক বেশি চিন্তিত? আপনার ঘরের আশপাশে শব্দদূষণ কেমন?

কলকারখানা, গাড়ির আওয়াজ, বিমানের শব্দেও অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। এমনকি আপনার ঘরের আলোর পরিমাণ ও আপনার ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঘুমের সমস্যাকে ছোট মনে না করে তা সমাধানে প্রথমেই মনস্থির করুন। প্রয়োজনে সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তবে প্রশান্তিময় ঘুমের জন্য ঘুমের আগে ঘর পুরোপুরি অন্ধকার করে নিন, আপনার বিছানা পরিষ্কার রাখা, ঘুম না আসা পর্যন্ত বিছানায় না যাওয়া, উল্টা গণনা করা ইত্যাদি। খেলাধুলাও আপনাকে এনে দেবে প্রশান্তিময় ঘুম।

সুতরাং পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম সুস্থ দেহ ও মনের জন্য অপরিহার্য। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জন্স ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া, বাংলাদেশ’ প্রতি বছর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব নিদ্রা দিবস উদযাপন করে আসছে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান- নাক, কান, গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগ। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল।

অধ্যাপক মনিলাল আইচ লিটু/বিএ/এমআরএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।