ধুলো-দূষণ বন্ধ হবে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মানুষ শহরে বাস করে উন্নত জীবনযাপনের জন্য। গ্রামের থেকে শহরের জীবন হবে উন্নত, স্বস্তিদায়ক। সেজন্য ব্যয়বহুল জীবন বেছে নেন মানুষজন। কিন্তু শহরেও প্রতি পদে পদে যদি ভোগান্তির শিকার হতে হয় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। রাজধানী ঢাকা এখন নানা দিক থেকেই বাস অনুপযোগী শহর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোকজনকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যত্রতত্র যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। সকাল বেলা বাসা-বাড়ি থেকে বের হয়ে লোকজনকে রীতিমত ধুলায় গোসল করে ফিরতে হয়। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস- এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে কাজ শেষ করে তো আরেক সংস্থা শুরু করে। এতে যেমন রাষ্ট্রের অর্থের শ্রাদ্ধ হয় তেমনি ভোগান্তিও বাড়ে। এক মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেক মন্ত্রণালয়ের কাজের কোনো সমন্বয় না থাকায় যুগ যুগ ধরে চলছে এই জগাখিচুড়ি অবস্থা। কিন্তু এ থেকে কি কোনো পরিত্রাণ নেই?

বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা বার বার বিভিন্ন জরিপে উঠে আসছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএর প্রতিবেদনে বিশ্বের দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের যে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতাস দূষিত এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত এক যুগে ৫৪ ধাপ নিচে নেমেছে।

এর আগেও বিভিন্ন জরিপে বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার শোচনীয় অবস্থার কথা ওঠে এসেছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। আর বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যাপার।

এরপরও কোনো প্রতিকার নেই। ঢাকার আশপাশসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ইটভাটা। বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে ধুলাবালি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। কিন্তু এসব স্থাপনা তৈরির সময় মানা হচ্ছে না ইমারত নির্মাণবিধি।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, উড়ালসড়ক নির্মাণ, বাড়িঘর নির্মাণ ও ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলের কারণে বাতাসে ধুলার পরিমাণ অত্যধিক মাত্রায় বেড়েছে। যদি সমন্বয় থাকতো তাহলে এই অবস্থা হতো না। তাছাড়া রাজধানীর কোথাও না কোথাও নির্মাণ কাজ চলছেই। এ কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার। যা দূষণের মাত্রা বাড়িয়েই চলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত মেগাসিটির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত অসুখে বছরে সাড়ে আট হাজার শিশু মারা যায়। বিষয়টি ভাবা যায়!

দখল-দূষণে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর করুণ অবস্থা। এছাড়া যানজট, যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিন্মমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ্ব এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি-ঘোড়া। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।

দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার।

এ অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু হতে হবে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সবার আগে বন্ধ করতে হবে যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি।

এইচআর/এমএস

‘ঢাকার আশপাশসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে এসব ইটভাটা। বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে ধুলাবালি।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।