চা উৎপাদন ও শ্রমিকের জীবন-মান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে চা শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চা শুধু পানীয় হিসেবে রাখলে চলবে না। এর বহুমুখীকরণ করতে হবে। চায়ের পাতা দিয়ে শ্যাম্পু, সাবান, লোশন ও আচারসহ অনেক কিছু প্রস্তুত করা সম্ভব। চায়ের পাতা দিয়ে টি-কোলা উৎপাদনে গবেষণা চলছে। গতকাল রোববার সকালে ‘বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী ২০১৮’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হল পুষ্পগুচ্ছতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শিল্পমন্ত্রী হিসেবে চাকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে দেশে ৮ কোটি ৮৫ লাখ কেজি চা উৎপাদন হচ্ছে। এ শিল্পে ৩ লাখ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যার অধিকাংশই নারী। ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় চা শিল্প প্রসারের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় চা শিল্প আজ অগ্রসরমান শিল্প। তিনি বলেন, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে চায়ের ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে। দেশীয় বাজারের সঙ্গে বিদেশেও চা রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া ধানের মতো খরা সহিষ্ণু ও বৃষ্টি সহিষ্ণু চা উৎপাদনের প্রক্রিয়াও চলছে।

এ সময় চা বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া এবং তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য চা বাগানের মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা আশা করবো চা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চা শিল্পের সাথে জড়িতদেরও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

চা বাঙালি জীবনে অন্যতম অনুষঙ্গ। সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের সঙ্গে এক কাপ চা না হলে যেন দিনই শুরু হয় না। শুধু সকাল কেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হোক বা অফিসের মিটিং এক কাপ চা হলে যেন আমেজটাই বদলে দেয়। চা সকলের অত্যন্ত পছন্দের একটি পানীয়।

দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ এবং রফতানি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা- ভিশন ২০২৫ বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশে আরো ৪ হাজার ৬৯৮ হেক্টর অনাবাদি জমিতে ১২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করা সম্ভব। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিপুল পরিমাণ উন্নত মানের চা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। এ জন্য চা শিল্পের উন্নয়নে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

চা এদেশে দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃত। মূলত এই শিল্পের জন্য উপযোগী ভূমি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত সস্তা শ্রমের কারণে এই অঞ্চল তাদের আকর্ষণ করে। আমাদের দেশের শ্রমিকদের মাঝে সবচেয়ে অবহেলিত এবং নির্যাতিত হচ্ছে চা শ্রমিকরা। যুগের পর যুগ এ সকল শ্রমিক শোষণ, নির্যাতন, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অপুষ্টি ও বিনা চিকিত্সায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ অবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে চা শিল্পের শ্রমিকের জীবন মানের উন্নয়নের সাথে চা শিল্পের উন্নয়নও নির্ভর করে।

চা কেবল একটি শিল্প নয়, চা বাগানগুলো পর্যটন কেন্দ্রও বটে। যেখানে বেড়ানোর জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন ছুটে আসেন। কিন্তু এই সুন্দর প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশের যারা রূপকার তাদের আজ করুণ অবস্থা। শ্রমিকরা হচ্ছে চা বাগানের প্রাণ। শ্রমিক বাঁচলে বাগান বাঁচবে। আর বাগান বাচলে দেশের শিল্প বাঁচবে। তাই শ্রমিকদের অবজ্ঞা করে নয়, তাদের বাঁচার মতো মজুরি দিয়ে, অনুকূল পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

‘চা বাঙালি জীবনে অন্যতম অনুষঙ্গ। সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের সঙ্গে এক কাপ চা না হলে যেন দিনই শুরু হয় না। শুধু সকাল কেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হোক বা অফিসের মিটিং এক কাপ চা হলে যেন আমেজটাই বদলে দেয়।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।