জাতিসংঘে বাংলা ভাষা
উইন সাহেব এবং তাঁর স্ত্রী কালেভদ্রে আমার সাথে দেখা করতে আসেন। আশি বছর বয়সেও তারা চমৎকার শারীরিক অবস্থায় আছেন।
পরিপাকতন্ত্রের চুন থেকে পান খসলেই তারা এখানে চলে আসেন। তাদের শারীরিক অবস্থার চাইতে বেশি আলাপ হয় অন্যান্য বিষয়ে। উইন সাহেবের জন্ম হংকং এ। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এদেশে এসেছিলেন। হার্ভার্ডে এসেছিলেন অধ্যাপনা করাতে।
এরপর কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন জাতিসংঘে। কাজের সুবাদে বাংলাদেশে গিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক জানেন তিনি। তিনি আসলে আমাদের আলাপ জুড়ে থাকে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যাপারে তিনি বরাবরই আশাবাদী। তিনি মনে করেন বাংলা জাতিসংঘের আরেকটি দাপ্তরিক ভাষা হতে পারে। একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে খুব উদ্বেলিত। তিনি মনে করেন বাঙালি জাতি হিসেবে অতুলনীয়। কোনো জাতি তো ভাষার জন্য এভাবে লড়াই করেনি, জীবন দেয়নি।
তিনি প্রায়ই ম্যান্ডারিন ভাষার ইতিহাস টেনে আনেন। তিনি মনে করেন আমরা বিশ্ব পরিমন্ডলে খুব প্রচারবিমুখ জাতি। তার মাতৃভাষা ম্যান্ডারিন। গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম জাতিসংঘে কি সব ভাষার চলন আছে। তিনি জানালেন যে কোন সদস্য দেশের প্রতিনিধি তাঁর দেশের ভাষায় কথা বলতে পারেন। তা সাধারনত ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়।
জাতিসংঘে ব্যবহারের জন্য প্রধান ভাষা ইংরেজি। তবে ছয়টি প্রধান ভাষা দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি, ম্যান্ডারিন, ফরাসি, আরবি, স্পানিশ এবং রাশান। এ প্রধান ভাষাগুলোর এ ভূমিকায় আসার পিছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস। ভাষাভাষীর সংখ্যা, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রভাব, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে তাদের প্রভাব এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ সে বিচারে অনেক আগিয়ে আছে।
আমাদের সময় এসেছে সংগঠিত উপায়ে এই বিষয়টিকে সামনে আনার। এতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের কদর বাড়বে, বাংলা ভাষাভাষীদের সুবিধে হবে। এই অমর ফেব্রুয়ারিতেই আমাদের জোরালো কর্মসূচি নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে তা বেগবান করতে হবে। উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাভাষাভাষীরা এতে বড় ভূমিকা রাখবে আশা করি।
জাগো বাংলাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখবার জন্য।
“মোদের গরব, মোদের আশা আমরি বাংলা ভাষা!”
লেখক : পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান, ফ্লোরিডা হাসপাতাল, ফ্যাকাল্টি, কলেজ অব মেডিসিন, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি।
এইচআর/পিআর