আমরা কি পেডোফাইল?

নায়না শাহরীন চৌধুরী
নায়না শাহরীন চৌধুরী নায়না শাহরীন চৌধুরী , সঙ্গীতশিল্পী, লেখক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বেশ কিছুদিন আগে আমার মেয়ে ইউ টিউবে বাচ্চাদের নানা কার্টুন, গান দেখতে দেখতে এমন একটি গান চালু করে যা শুনে আমি কান খাড়া করি ও এগিয়ে এসে দেখি হিন্দি গানের রিমেক এবং দু জন ৯/১০ বছরের ছেলে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করে গান গাইছে ও নাচছে। তাদের যে বয়স তাতে ডাবল মিনিং গান গাওয়ার ও এ ধরনের অঙ্গভঙ্গি করার কথা নয়। আমার মেয়ের সেটা বোঝার বয়স না বিধায় আমি তাকে অন্যভাবে বুঝিয়ে অন্য কিছু দেখতে দেই।

ইন্টারনেট চাইল্ড সিকিওরড করার পরও এ ধরনের ভিডিও থাকে, এবং আমি ভেবে অবাক হই এই সব ভিডিওতে অংশগ্রহণকারী ছেলে-মেয়েদের বাবা মা-এতে খারাপ কিছু মনে করেন না। ক’দিন আগে, একুশে টিভির মুক্ত খবরে এর উপর একটি রিপোর্ট হয়, এতে যে ভয়াবহ ভিডিওগুলো দেখানো হয় তাতে আমাদের বাচ্চাদের নৈতিক ও মানসিক স্খলন হতে বাধ্য। বিশেষ করে মফস্বলে যেখানে, বিনোদন সীমিত, সেখানে এধরনের ভিডিও স্লো পয়জনের মত আমাদের সন্তান ও বিভিন্ন বয়সী মানুষের মনে যা বয়ে আনছে তা শিশুকামিতা কে প্রশ্রয় দিচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

যারা এ ধরনের ভিডিওতে অংশ গ্রহণ করছে, তারা বেশির ভাগ ১২ এর নিচের বয়সী। তাদের বাবা মা সহজ জনপ্রিয়তার মোহে তাদের সন্তানদের এধরনের গানে ঠেলে দিচ্ছেন। তারা হয়তো ভাবছেন, ছোট, ওরা বড়দের মত আচরণ করছে, বিষয়টা মজার, ওদের ওপর এ বয়সে কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু, এই বয়সেই প্রভাব পড়তে থাকে। একুশে টিভির সেই রিপোর্টে অংশগ্রহণকারী শিশুরাই স্বীকার করে, প্রথমে অন্য একটি ছেলে বা মেয়ের স্পর্শ, কাছে আসা তাদের কাছে অদ্ভুত লাগত, ভাল লাগত না, কিন্তু এখন ভাল লাগে, এবং তারা এরকম ভিডিও আরও করতে চায়।

আমরা আমাদের বাচ্চাদের বয়সের আগেই যৌনাগ্রহী করে তুলছি কেন? এসব কারণ কি বাল্য বিবাহের সাথে যুক্ত? যাতে তারা ১৮ বছরের আগেই প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে? কেন এত বড় সর্বনাশ চাই আমরা আমাদের সন্তানদের? এ ধরনের ভিডিও একটা দুটো নয়, শয়ে শয়ে ইউটিউবে ঘুরে বেড়ায়।

বাচ্চাদের মজার জিনিস দেখাবেন, চলে আসবে। বাচ্চা দেখতে শুরু করলে তাকে কিভাবে নিরস্ত করবেন? তার মগজে কি আংশিক ভাবেই সেই গানের কথা ভিডিও ঘুরে বেড়াবে না? প্রশাসন কি নজর দেবেন আরেকটু। এ ধরনের ভিডিও একটা সুস্থ সমাজে চলবে এবং এটা হলে আমাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হবে না সেটার গ্যারান্টি কে নিচ্ছে?

এটা কি সত্যি বিনোদনের কিছু? নাকি এক অন্ধ বিকৃতি? আমরা কিভাবে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের মুখে ডাবল মিনিং এর গান শুনে তৃপ্তি পেতে পারি? কিভাবে পারি আপনার বা আপনার নিকটজনের বয়সী কোন শিশুর মুখে যৌতুক, তালাক বা ইভ টিজিং এর গান শুনতে, কোন রুচিতে আমরা আনন্দ পাই পরিজন নিয়ে দুইটি অবুঝ শিশুর বিকৃত অঙ্গ ভঙ্গি দেখতে, কিংবা এসব গানের বিষয়বস্তুর সাথে শিশুরা কিভাবে যায়?

আপাত দৃষ্টিতে যদি আপনার কাছে ক্ষতিকর বা অরুচিকর না মনে হলেও, এসবের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আপনার শিশুর মনে রয়ে যাবে। উদ্বুদ্ধ করবে কোন পেডোফাইল ধর্ষককে। ভুল পথে এমনিতেই হাঁটছে একটা অংশ। এসব গানের কথা ও বিষয়বস্তু প্রচারে নেই কোন বাধা, তাই সমাজে এর প্রভাব এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অস্থিরতা আনেনি সে বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবে না।

শিশুরা সরল কিন্তু বোকা নয়। তারা অনেক কিছু বুঝে নেয়। এসব ভিডিওর মাধ্যমে শিশুরা কি শিক্ষা পাচ্ছে একবার ভেবে দেখবেন। মদ, সিগারেট, ইয়াবা আমাদের আইন ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রনণ করছেন। আশা করি এই ধরনের ভিডিও’র উপর নিষেধাজ্ঞা অথবা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সহজ বর্তমান ও সুন্দর ভবিষ্যৎ রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এগিয়ে আসবেন।

লেখক : কলামিস্ট।

এইচআর/পিআর

বাচ্চাদের মজার জিনিস দেখাবেন, চলে আসবে। বাচ্চা দেখতে শুরু করলে তাকে কিভাবে নিরস্ত করবেন? তার মগজে কি আংশিক ভাবেই সেই গানের কথা ভিডিও ঘুরে বেড়াবে না? প্রশাসন কি নজর দেবেন আরেকটু। এ ধরনের ভিডিও একটা সুস্থ সমাজে চলবে এবং এটা হলে আমাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হবে না সেটার গ্যারান্টি কে নিচ্ছে?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।