ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে সামান্যতম গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই। দুঃখজনক হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে-বাহ্যত এমন মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু বিষয়টি সে রকম নয়। কেননা খোদ রাজধানীতেই বেড়ে গেছে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। মানুষের জীবনও যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

ছিনতাইকারীর দখলে থাকছে ভোরের ঢাকা। রাস্তায় একা চলতে মানুষ ভয় পায়। গত শুক্রবার ভোরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মিরপুর সড়ক পার হচ্ছিলেন হেলেনা বেগম। পেছন দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের চালক জানালার কাচ নামিয়ে হেলেনার ব্যাগ ধরে হেঁচকা টান দেয়। এতে তাঁর হাত আটকে যায় সেই জানালায়। টান লেগে প্রাইভেট কারের জানালায় ঝুলতে থাকেন হেলেনা। হঠাৎ আক্রান্ত হয়ে ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকারও করেন তিনি। এভাবে প্রায় ২০ গজ দূরে চলে যাওয়ার পর ছিটকে পড়েন রাস্তায়। এরপর সেই ‘ভয়ংকর গাড়ির’ পেছনের চাকার নিচে পড়ে থেঁতলে যায় হেলেনার মুখ। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

প্রায় একই সময় মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৩৬) নামে খুলনার এক ব্যবসায়ী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন সায়েদাবাদ এলাকায়। স্বামীবাগ রেললাইনে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে নিজেই ছুটে যান হাসপাতালে। একপর্যায়ে তার মৃত্যু। এছাড়া শুক্রবার সন্ধ্যায় হাজারীবাগে ছুরিকাহত হয়েছেন জাকির হোসেন নামে এক তরুণ। ওই সময় তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবারের এই তিন ঘটনার মতো আগেও বেশ কয়েকটি ঘটনায় ছিনতাইকারী এবং ‘টানা পার্টি’ নিয়ে ব্যাপক উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের কলেজ গেট থেকে রিংরোড, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে মিরপুর ১, আগারগাঁও সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক, কালশী রোড, মৌচাক মার্কেট থেকে মগবাজার, সদরঘাট থেকে সূত্রাপুর, সদরঘাট থেকে দয়াগঞ্জ, ওয়ারী, উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুর, ঝিগাতলা থেকে রায়েরবাজার, ঝিগাতলা থেকে শংকর, মিরপুরের রূপনগর বেড়িবাঁধ, গুলিস্তান থেকে পল্টন, সার্ক ফোয়ারা থেকে রমনা পার্ক, কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেত, পলাশী থেকে আজিমপুর এবং যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড় থেকে শ্যামপুর এলাকায় টানা পার্টি বেশি সক্রিয়। এসবের মধ্যে রমনা, পল্টন, হাইকোর্ট মোড়, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর রোড, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড ও মৌচাক এলাকায়ও সাদা গাড়ি নিয়ে টানা পার্টি সক্রিয়।

টানা পার্টিতে জড়িত মাদকাসক্তরা। রাজধানীতে প্রতিদিনই টানা পার্টির টান দিয়ে ব্যাগ কেড়ে নেওয়া বা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আর বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে ভোরে। কিছু ঘটনা ঘটে বিকেল থেকে মধ্যরাতে। ওই সময় শহরে পুলিশের নজরদারির ক্ষেত্রে ব্যাপক উদাসীনতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় নির্ধারিত চেকপোস্টেও পুলিশ সদস্যরা থাকেন না। কোথাও কোথাও টহলের দায়িত্বরত সদস্যরাও গাড়ি রেখে ঘুমিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানীতে এত এত বাহিনী। বলতে গেলে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে রাজধানী। এর মধ্যেও যদি জানমালের নিরাপত্তা না থাকে সেটি খুবই দুঃখজনক। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ছিনতাইকারী একাধিকবার ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আবারও ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধের শাস্তি না হলে তা কমার কোনো কারণ নেই। এজন্য অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘর থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বাইরে বের হন। তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সেটি দেখতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। রাজধানীতে থানার সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সংখ্যাও। কিন্তু অপরাধ না কমে বরং বাড়ছে। এই বৈপরীত্য চলতে পারে না।

এইচআর/জেআইএম

‘জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘর থেকে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বাইরে বের হন। তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে সেটি দেখতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।