উড়াল সড়কে যানজট নিরসন হোক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:০৪ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

রাজধানীবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর খুলে দেয়া হলো মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন। মগবাজার-মৌচাক একটি দীর্ঘ ফ্লাইওভার, এটি নগরীর যানজট নিরসনে গুরত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট ও ফ্লাইওভার ব্যবহারে নগরবাসীকে যত্নবান হতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। উড়াল সড়ক এক দৃশ্যমান উন্নয়ন বাস্তবতা। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি উড়াল সড়ক চালু হয়েছে। এরমাধ্যমে কাঙ্খিত যানজট সমস্যার সমাধান হবে- এটাই প্রত্যাশা।

বাস্তবতা হচ্ছে নানাবিধ ব্যবস্থা নেয়ার পরও যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে দিন দিন তা বাড়ছে বৈ কমছে না। প্রতিদিনই রাজধানী প্রায় স্থবির হয়ে থাকছে। থেমে চলছে সব ধরনের যানবাহন। মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের সহসা কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। উন্নয়ন অগ্রগতিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে অচল রেখে কোনো উন্নয়নই আখেরে গতি পাবে না। উন্নয়ন অগ্রগতির সর্বাগ্রে রাখা উচিত যানজটমুক্ত সচল ঢাকার মহাপরিকল্পনা।

উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কম হলো না। অটো সিগন্যাল বাতি লাগানো হল। কদিন পরই সব নষ্ট। আবার ম্যানুয়াল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামে আর চলে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জ্যামে পড়লে সবারই একই দশা। যদিও গুরুত্বভেদে জরুরি ভিত্তিতে কিছু গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু রাস্তা তো একই। কিভাবে চলবে? ব্যতিক্রম দেখা যায় শুধু ভিআইপি, ও ভিভিআইপিদের বেলায়। তখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তেই। আর এর জের টানতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ যানজটে আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। গত ১০ বছরে যানচলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। যা পায়ে হেঁটে চলার গড় গতি (৫ কি.মি.) হতে একটু বেশি। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে। ঢাকা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার শহরায়ণ সম্প্রসারণে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।

যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শরীরের সকল মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয় তেমনি রাজধানীতেই সবকিছু করার নামও উন্নয়ন নয়। যানজটে জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছুর। এটি আমাদের নীতি নির্ধারকরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গলজনক হবে।

এইচআর/এমএস

‘যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।