জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:১৪ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

নিষোধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও ইলিশ ধরা বন্ধ হচ্ছে না। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ২২ দিন দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ। এই সময়ে ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্র্ণ নিষিদ্ধ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার এবং ভোক্তাসহ সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ। বলা বাহুল্য এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে জাতীয় সম্পদ রক্ষায় জাতীয় সচেতনতা এখনো তৈরি হল না। ইলিশ ধরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে ইলিশ ধরা চলছেই। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মানিকগঞ্জে পদ্মা-যমুনায় চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না মা ইলিশ ধরা। সুযোগ বুঝে নদীতে নামছে শত শত জেলে। তবে পেশাদারের চেয়ে মৌসুমি জেলের সংখ্যাই বেশি। কোথাও কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের মদদ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদই নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে ইলিশের ওপর। অর্থনীতিতেও রয়েছে বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ ভাগ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য আট হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ মাছ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় দুই শতাংশ। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে।

সম্ভাবনার ইলিশকে তাই রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। যারা ইলিশের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাদের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন ১৫টি জেলার ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২ জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটা খুবই কার্যকর একটি পন্থা। ভবিষ্যতে এর আওতা আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তবে জেলেদের দায়িত্ব হচ্ছে নগদ প্রাপ্তির লোভ ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মা ইলিশ না ধরা। যদি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মা ইলিশ ধরা হয় সেটি হবে আত্মঘাতী। জাতীয় স্বার্থে ডিমওয়ালা মা ইলিশ না কেনাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এইচআর/জেআইএম

‘সম্ভাবনার ইলিশকে তাই রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।