সবার উপরে মানুষ সত্য

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:১১ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। সময় ক্ষেপণের জন্য নিচ্ছে নানা অপকৌশলও। কিন্তু নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ দিনের পর দিন আশ্রয় দিতে পারবে না। এটা বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। যুগের পর যুগ তারা সে দেশে বাস করছে। ‘সন্ত্রাসবাদের’ নামে তাদের দেশ থেকে বিতাড়ন চলবে না। বিশ্বসম্প্রদায়কে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে নিজ দেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে অমানবিক অবস্থায় ফেলে কিছুতেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

আশার কথা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নে সমর্থন দিয়েছেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দফতরের ইকোসক চেম্বারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত আরিয়া ফর্মুলা সভায় এই সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। ব্রিটিশ ও ফরাসী ডেলিগেশন এই সভার আয়োজন করে। এ্যাডভাইজরি কমিটি অন রাখাইন স্টেটের চেয়ারম্যান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান এ সভায় বক্তব্য রাখেন। কফি আনান তার বক্তব্যে সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশকৃত ‘এ্যাডভাইজরি কমিটি অন রাখাইন স্টেট’ এর রিপোর্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। রাখাইন প্রদেশের জনগণের স্থায়ী শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও চলমান সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার তার কমিশন প্রণীত প্রতিবেদনের সুপারিশমালার বাস্তবায়ন করবে মর্মে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। কফি আনান রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন, মানবিক সহায়তা ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কফি আনান তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গোটা বিশ্বকেই নতুন করে ভাবতে হবে। একটি অঞ্চলকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল রেখে কোনো অঞ্চলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক-লাভালাভের হিসাবের চেয়ে মানবতাকে বড় করে দেখতে হবে। সমগ্র বিশ্ব যখন হিংসায় উন্মত্ত, রক্ত ঝরছে বিশ্বের নানা প্রান্তে তখন বাংলার মধ্যযুগের কবি বড়ু চণ্ডীদাসের মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'- এই সত্য পথ দেখাতে পারে।

এইচআর/এমএস

‘বিশ্বসম্প্রদায়কে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে নিজ দেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে অমানবিক অবস্থায় ফেলে কিছুতেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।