হাইড্রোলিক হর্নের শব্দদূষণ কবে বন্ধ হবে?
ঢাকার রাস্তায় ২৭ আগস্টের পর কোনো যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এই আদেশ দেন গত ২৩ আগস্ট। আদেশে বলা হয়, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বাজারে থাকা সব হাইড্রোলিক হর্ন সাত দিনের মধ্যে জব্দ করতে হবে। কোর্টের এই নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটি যেন বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা। কিন্তু এতদিন পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
রাজধানী ঢাকা নানা দিক থেকেই বাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম। যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার এই শব্দদূষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে, সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না কেউ। বরং দেশের অধিকাংশ যানবাহনেই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণভাবে মানুষ ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দই ভালো শুনতে পায়। তার চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তিসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ যানবাহনে এখনো ব্যবহার হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। যা ১০০ ডেসিবলেরও বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে থাকে।
মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারে মাত্র ১০০ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় গাড়ির চালকরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না। তাছাড়া অনেক চালক আইনে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধের বিষয়টি জানেও না। মানুষের শ্রবণ সীমার স্বাভাবিক মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। যার বেশি হলে শব্দ দূষণে পরিণত হয় যা থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ ক্লান্তি এবং বধিরতা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া যে সকল রোগ হতে পারে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিষ্কের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যা অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ীভাবে বধির করে দেয়।
শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে হলে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধের আদেশ যাতে বাস্তবায়ন হয় এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও আমদনি নিষিদ্ধ নয় বা এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই আমদানি করা হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। এ ব্যাপারে আইনি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে আমদানির ওপর। গাড়ির চালককেও সচেতন করতে হবে। শব্দদূষণ থেকে সবাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনুধাবন করতে হবে সেটিও।
এইচআর/এমএস