একবিংশ শতাব্দীর নিঃসঙ্গতার গল্প

ড. মতিউর রহমান
ড. মতিউর রহমান ড. মতিউর রহমান , গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রযুক্তি বর্তমানে মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, বিশেষ করে ডিজিটাল সংযোগের প্রসার দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিয়েছে। গত কয়েক দশকে স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সংযোগ বেড়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব, যা বিশ্বব্যাপী সম্পর্কে নতুন মাত্রা এনেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে, তথ্য আদান-প্রদান এবং ব্যক্তিগত জীবন এখন মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে শেয়ার করা যাচ্ছে, যা সামাজিক সম্পর্কের ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছে।

তবে, এই প্রযুক্তির কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। একদিকে এটি মানুষকে কাছে আনলেও, অন্যদিকে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্ব বেড়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে মানুষ ডিজিটাল জগতে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছে যে, তারা বাস্তব জীবনের মানবিক যোগাযোগকে প্রায় ভুলতে বসেছে। এই পরিস্থিতি অনেকের মধ্যে নিঃসঙ্গতা ও মানসিক সমস্যা তৈরি করছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডিজিটাল যুগে মানুষের সংযোগের ধরণ পরিবর্তিত হলেও, এই পরিবর্তন কতটা স্বাস্থ্যকর তা একটি বড় প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো আধুনিক সমাজে যোগাযোগের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে। এখন মানুষ স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বের যে কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারে, যা আগে প্রথাগত টেলিফোন ও চিঠির মাধ্যমে করতে অনেক সময় লাগত। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং লিঙ্কডইন-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানুষকে যুক্ত করে মতামত প্রকাশ ও তথ্য জানানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

ডিজিটাল যুগে মানুষ বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হলেও, অনেকে নিঃসঙ্গতার শিকার। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখা গেলেও, তা ব্যক্তিগত ও বাস্তব সম্পর্কের গভীরতা আনতে পারে না। ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ রাখলে মানুষ সামাজিকভাবে সক্রিয় আছে মনে করলেও, এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ এই যোগাযোগ প্রায়ই অকার্যকর ও অবাস্তব হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ইমেইল, ভিডিও কল ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দ্রুত এবং কার্যকরভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এই প্রযুক্তিগত উন্নতি সমাজে যোগাযোগের সুবিধা বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে সামাজিক, ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীরা সহজে যুক্ত হতে পারায় সামাজিক সম্পর্কের বিস্তার ঘটছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এখন মানুষ খুব সহজেই প্রিয়জন, পরিচিতজন ও নতুন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে। ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ভিডিও কলের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে। এই সহজতা ও গতিশীলতা সম্পর্কের ধরন ও যোগাযোগ পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগের ফলে মানুষ ব্যক্তিগত, পেশাদার ও সামাজিক জীবনকে আরও উন্নত করতে পারছে।

তবে, এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে প্রযুক্তির প্রভাবে বাস্তব জীবনে মানুষের সম্পর্কের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। আগে সামাজিক সম্পর্কগুলো মূলত সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে গড়ে উঠত, যেখানে বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সাথে দেখা করে অনুভূতি ও চিন্তা বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল সম্পর্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বাস্তব সম্পর্কের স্থান দখল করতে শুরু করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থাকা সহজ হলেও, এখানে বাস্তব জীবনের অনুভূতি ও গভীরতা কমতে শুরু করেছে। ডিজিটাল যোগাযোগ বাস্তব জীবনের অনুভূতির বিকল্প হতে পারে না, এবং এর ফলে মানুষের মধ্যে একাকীত্বের অনুভূতি বাড়ছে। অনলাইনে পরিচিতদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও, বাস্তবে একা থাকার অনুভূতি বাড়ছে। একা থাকার অভিজ্ঞতা এবং গভীর সম্পর্কের অভাবে মানুষের মানসিক অবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে, যা মানসিক ও আবেগীয় বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত ডিজিটাল যোগাযোগের কারণে সম্পর্কে আবেগগত দূরত্ব তৈরি হতে পারে, যা একাকীত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের অভাব এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কম দেখা যায়, এবং মুখোমুখি আলোচনার পরিবর্তে ভার্চুয়াল যোগাযোগ বাড়ছে, যা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকে প্রভাবিত করছে। গবেষণা বলছে, ডিজিটাল যুগে বন্ধু বা পরিবারের কাছ থেকে সরাসরি সহযোগিতা না পেলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ে। একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। তাই, বর্তমানে মানুষ ডিজিটালি সংযুক্ত থাকলেও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

অনলাইন সম্পর্ক এখন মানুষের জীবনের একটি অংশ, যেখানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের মাধ্যমে মানুষ সম্পর্ক স্থাপন করে, কিন্তু এই সম্পর্কগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনলাইন সম্পর্কগুলো প্রায়শই অগভীর হয় এবং এর জন্য মানুষের ব্যক্তিগত সময়, সান্নিধ্য ও গভীর অনুভূতির প্রয়োজন হয় না। ডিজিটাল মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ করা গেলেও, তা বাস্তব সম্পর্কের গভীরতা আনতে পারে না। অনলাইন সম্পর্কগুলো কখনও কখনও ইমোজি ও মন্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা সম্পর্কের প্রকৃত অনুভূতি প্রকাশে বাধা দেয় এবং ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের মাধ্যমে মৌলিক মানবিক সম্পর্কের অভাব তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, বাস্তব সম্পর্কে অনুভূতির গভীরতা থাকে। মুখোমুখি কথা বলার সময় মনের ভাব ও শরীরের ভাষা থেকে সম্পর্কের প্রকৃতি বোঝা যায়। অনলাইনে ছবি বা লেখার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া গেলেও, তা সম্পর্কের গভীরতা ও আন্তরিকতাকে সীমিত করে দেয়। বাস্তব জীবনে সম্পর্কের প্রকৃত অনুভূতি উপলব্ধি করা যায়, যা অনলাইনে কঠিন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো মানুষকে যুক্ত করলেও, সম্পর্কের একটি মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ দৃশ্য তৈরি করে।

বিজ্ঞাপন

এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রায়ই মানুষের সুখী মুহূর্তের ছবি দেখা গেলেও, তা বাস্তবের থেকে ভিন্ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো ছবিগুলো প্রায়শই সাজানো থাকে এবং জীবনের সম্পূর্ণ চিত্র সেখানে থাকে না। এই ধরনের মিথ্যা দৃশ্য ভুল ধারণা তৈরি করে এবং একে অপরের প্রতি আমাদের প্রকৃত অনুভূতিকে আড়াল করে, যা সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মানুষকে মানসিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করে তোলে।

ডিজিটাল যুগে মানুষ বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হলেও, অনেকে নিঃসঙ্গতার শিকার। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখা গেলেও, তা ব্যক্তিগত ও বাস্তব সম্পর্কের গভীরতা আনতে পারে না। ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ রাখলে মানুষ সামাজিকভাবে সক্রিয় আছে মনে করলেও, এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ এই যোগাযোগ প্রায়ই অকার্যকর ও অবাস্তব হয়। এই ডিজিটাল বিচ্ছিন্নতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। শারীরিকভাবে একা থাকলে এবং কাছের মানুষের সাথে সংযুক্ত হতে না পারলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা বাড়ে।

ডিজিটাল সম্পর্ক মানসিক সমর্থন ও গভীর সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে না। আবেগের অভাব এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির সুযোগ কমে যাওয়ায় হতাশা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বাস্তব জীবনে আন্তরিকতা কমে গেলে, তা একাকীত্বের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা, যেমন অতিরিক্ত অনুসরণ করা বা লাইকের আশা করা, মানুষকে চাপে ফেলে এবং মানসিক অশান্তি তৈরি করে। মানুষ যখন সম্পর্কের প্রকৃত ভিত্তি খুঁজে পায় না, তখন তারা নিজেদের অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়া বা একা মনে করে। এই অনুভূতি আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অভাব এবং একাকীত্বের অনুভূতি মানসিক স্থিতিশীলতা ও সুখের পথে বড় বাধা।

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সমাজে সংযোগ ও সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো সম্ভব। ডিজিটাল সম্পর্ক সীমাবদ্ধ ও মিথ্যা হতে পারলেও, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা বাস্তব সম্পর্ককে উন্নত করতে এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ককে শক্তিশালী করা যায়। সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব, বিশেষ করে যারা ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকেন। ভিডিও কল, মেসেজিং অ্যাপ ও অনলাইন মিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে একে অপরের সংস্পর্শে আসা যায়, যা সম্পর্কের আন্তরিকতা বাড়াতে সহায়ক।

এভাবে, প্রযুক্তিকে ব্যক্তিগত ও মানবিক স্তরে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিজিটাল সংযোগের মাধ্যমে বাস্তব সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ভার্চুয়াল মনে হলেও, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে পারে। শুধুমাত্র লাইক বা কমেন্টের পরিবর্তে একে অপরের সাথে সহানুভূতি ও অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে এই সংযোগগুলোকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। প্রযুক্তির মাধ্যমে বন্ধুত্ব, সহানুভূতি ও সমর্থন বৃদ্ধি করে একাকীত্বের অনুভূতি কমানো যায়।

মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে প্রযুক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে, প্রযুক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে। অনলাইন মনোবিদ বা থেরাপি প্ল্যাটফর্মগুলো মানসিক চাপ কমাতে এবং উদ্বেগের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, প্রেরণাদায়ক অনলাইন সম্প্রদায় ও গ্রুপগুলো ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সহায়ক। অনলাইন প্রশিক্ষণ, যোগব্যায়াম ক্লাস ও মেডিটেশন সেশনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। ভার্চুয়াল সাপোর্ট সিস্টেম মানুষের মানসিক সুস্থতার উন্নতি ঘটায় এবং একাকীত্ব কমাতে সাহায্য করে।
প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করতে, সচেতনভাবে এর মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং মানসিক সুস্থতার জন্য এর সহায়তা নিতে হবে। ডিজিটাল যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে প্রযুক্তি সামাজিক সংযোগ ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল যুগে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃতি ও নিঃসঙ্গতা নিয়ে নতুন চিন্তা তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি জীবনকে সহজ ও সংযুক্ত করলেও, এর প্রভাবে বাস্তব সম্পর্কের গভীরতা এবং মানবিক সংযোগের প্রতি আমাদের ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত সংযুক্ত হওয়া গেলেও, তা বাস্তব জীবনের অনুভূতির সমান হতে পারে না। এই বাস্তবতা সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্ব ও এর গুণগত গভীরতা বজায় রাখতে সচেতন হতে শেখায়। প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি, মানবিক সম্পর্কের গুরুত্বও মনে রাখতে হবে। প্রযুক্তি জীবনকে আরও উন্নত করতে পারলেও, মানুষের মধ্যেকার আন্তরিক বন্ধন ও অনুভূতির বিকল্প এটি হতে পারে না।

বাস্তব সম্পর্কে ব্যক্তিগত সংযোগ, আবেগ ও আন্তরিকতার গভীরতা থাকে, যা মানসিক শান্তির জন্য প্রয়োজন। তাই, ডিজিটাল যোগাযোগের সুবিধা গ্রহণ করা উচিত, কিন্তু তা যেন শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কের প্রকৃতির থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে না দেয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ তৈরি করা দরকার, যেখানে প্রযুক্তি ও মানবিক সম্পর্ক একে অপরের পরিপূরক হবে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাস্তব সম্পর্কের ঐতিহ্য ও মানবিক মূল্যবোধকেও ধরে রাখতে হবে। এই ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ মানসিক সুস্থতা, গভীর সম্পর্ক ও সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও সুখী পৃথিবী গড়তে সহায়ক হবে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

বিজ্ঞাপন

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।