কারামুক্ত হয়ে বললেন বিডিআর সদস্যরা

বিনা দোষে আমাদের জীবন থেকে ১৬টি বছর চলে গেছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
কারামুক্তির পর অশ্রুসিক্ত এক বিডিআর সদস্য

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় কারাগার থেকে বিডিআরের ১৭৮ জওয়ান কারামুক্ত হয়েছেন। আজ সকাল থেকে কারাগারের সামনে বিডিআর সদস্যদের স্বজনরা তাদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১টা থেকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলার জামিনপ্রাপ্তরা একে একে বের হতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

কেরানীগঞ্জ কারাগারের সামনে সকাল থেকে বিডিআর সদস্যদের স্বজনরা ফুল ও ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর ১টা থেকে যখন জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা কারামুক্ত হয়ে বের হয়ে আসছিলেন তখন তাদের দেখে স্বজনরা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন।

এ সময় এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যরা এবং তাদের স্বজনরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রী-সন্তান কিংবা স্বজনদের জড়িয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন বিডিআর সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তাদের সঙ্গে সঙ্গে স্বজনরাও জামিনপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।

কারাগার থেকে বের হয়ে বিডিআর সদস্যরা বলেন, বিনা দোষে জীবন থেকে আমাদের ১৬টি বছর চলে গেছে। আমাদের কোনো দোষ ছিল না। অন্যায়ভাবে ১৬টি বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এখন মুক্ত আকাশে বের হয়ে আমাদের ভালো লাগছে।

কারামুক্ত হয়ে আল-আমিন নামে এক বিডিআর সদস্য বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। আমাদের বিনা দোষে এতগুলো বছর ধরে কারাগারে বন্দি করে রেখে দেওয়া হয়। আজ আমরা কারামুক্ত হয়েছি। তবে এখনো আমাদের যেসব ভাই বিনা দোষে কারাগারে রয়েছেন তাদের জন্য সরকার দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা করুক।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

স্বজনদের জড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় আরেক বিডিআর সদস্য বলেন, আমাদের জীবন তো শেষ, আমাদের জীবনের ১৬টি বছর কারাগারে কেটেছে। আমরা কোনো দোষ করিনি। অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়। এখন পরিবার পরিজনের কাছে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।

এ সময় এক বিডিআর সদস্যের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে আমি ফিরে পেয়েছি। কোনোদিন ভাবিনি তাকে ফিরে পাবো। এতটা দিন কারাগারে তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া কারামুক্ত বিডিআর সদস্যদের বরণ করে নিতে আসেন তাদের সন্তানরাও। সন্তানরা বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। আবার অনেক সন্তান তাদের বাবাকে ফুলের মালা কিংবা ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন।

এ বিষয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির জাগো নিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর থেকে সাবেক বিডিআরের সদস্যদের কারামুক্তি শুরু হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৭ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৯৫ জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনসহ মোট ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য আজ পর্যায়ক্রমে জামিনে মুক্তি পেলো।

এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিনপ্রাপ্ত বিডিআরের ১৭৮ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত জামিনপ্রাপ্ত এসব আসামিদের নাম প্রকাশ করেন। বুধবার (২২ জানুয়ারি) তাদের জামিননামা দাখিল করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।

টিটি/এমআরএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।