আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সরকারের কঠোরতায় নমনীয় দু’পক্ষ

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৩ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৫
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়/ফাইল ছবি

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ক্যাডার ও বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এমনকি এ খসড়া সুপারিশ ঘিরে আন্দোলনে নামেন প্রশাসন ও ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দ্বন্দ্ব ও আন্দোলনের ঘনঘটার মধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার।

সরকারি আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানো কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।

সরকারের কঠোর অবস্থানের পর প্রশাসনের বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে নমনীয় অবস্থান দেখা গেছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আর নতুন করে কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না। গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবাদ সভায় দেওয়া কর্মকর্তাদের বিতর্কিত বক্তব্যকে সংগঠনের বক্তব্য নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে কলমবিরতি, মানববন্ধনের পর ৩ জানুয়ারি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ করার কথা থাকলেও এখন তারা ‘জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস বিনির্মাণে করণীয়: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা করবেন। শুক্রবার রাজধানীর খামার বাড়িতে সকাল সাড়ে ৯টায় এ আলোচনা সভা হবে।

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সরকারের কঠোরতায় নমনীয় দু’পক্ষ
২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি-ফাইল ছবি

গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ৫০ ও বাকি ৫০ শতাংশ আসবেন অন্য ক্যাডারগুলো থেকে। একইসঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বাইরে রাখার প্রস্তাব দেবে কমিশন।

আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে একবার বসেছি। সেখানে আমরা আমাদের কথাগুলো বলেছি। বলেছি উপসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে আদালতের রায় আছে। প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ উপসচিব হবেন। আদালতের রায়ের বাইরে তো কথা বলা যায় না। ওনার তখনও এটা জানতেন না।—মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

কমিশনের এ খসড়া সুপারিশের খবর প্রচারিত হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারসহ ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা। উপসচিব পদোন্নতির কমিশনের খসড়া সুপারিশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্বে জড়ান বাকি ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

উভয় পক্ষই নিজেদের দাবির পক্ষে কর্মসূচিও পালন করেছেন।

আরও পড়ুন

গত ২২ ডিসেম্বর কমিশনের খসড়া সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে বড় ধরনের জমায়েত করেছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এরপর ২৫ ডিসেম্বর তারা ‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’প্রতিবাদ সভা করেন। সেই সভায় কোনো কোনো কর্মকর্তারা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ও সরকারকে জড়িয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদত্যাগও দাবি করেন।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে ২৪ ডিসেম্বর এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তা। এরপর ২৬ ডিসেম্বর নিজ নিজ অফিসের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। ৩ তারিখে তাদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সরকারের কঠোরতায় নমনীয় দু’পক্ষ
জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভা-ফাইল ছবি

অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডার ও ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ২৫ ক্যাডার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওএসডি সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজকে গত ৩০ ডিসেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া গত ১ জানুয়ারি অসদাচরণের অভিযোগে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকায় সংযুক্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে সরকারি কলেজের প্রভাষক চারজন। তারা হলেন আনোয়ার হোসেন ফকির, তানভীর খান, রফিকুল ইসলাম ও অসীম চন্দ্র সরকার। অন্যজন সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ উল্লাহ কায়সার।

এরপর ৩১ ডিসেম্বর ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ মনে করিয়ে দিয়ে দু-পক্ষকে কঠোর বার্তা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন

প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওইদিন (২৫ ডিসেম্বর) সভায় যা বলা হয়েছে, সেগুলো অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য নয়। সেই অবস্থানে আমরা নেইও। আমরা এক থাকবো, প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোনো রকমের কোটা আরোপ করতে না দেওয়াসহ ছয় দফার কথা বলেছি। সেই অবস্থানেই আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে একবার বসেছি। সেখানে আমরা আমাদের কথাগুলো বলেছি। বলেছি উপসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে আদালতের রায় আছে। প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ উপসচিব হবেন। আদালতের রায়ের বাইরে তো কথা বলা যায় না। ওনার তখনও এটা জানতেন না।’

‘মীমাংসিত বিষয় নিয়ে এভাবে কথা বলে দেশের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হলো। এটার জন্য দায়ী কে? এতদিন তো এটা নিয়ে কথা হয়নি। কেউ এটা ওনাদের কাছে চায়ওনি মনে হয়। একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলো তারা। এটা কেন করা হলো সেটা চিহ্নিত করা উচিত।’

আমাদের চাওয়া পাওয়া থাকতে তবে আমরা চাই একটা জনবান্ধব প্রশাসন যাতে হয়। যার যার কাজ সে করে যাতে জনগণকে উপযুক্ত সেবাটা দিতে পারে। আমরা এখানে অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার কিছু দেখছি না। আশা করি সরকার আমাদের সঙ্গে কথা বলবে।—মুহাম্মদ মফিজুর রহমান

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংস্কার কমিশন একটা অযৌক্তিক প্রস্তাব দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এরপর আর তারা কিছু বলছে না। এরপর আমরা দেখলাম প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মিটিং করে যে ভাষায় কথা বলেছে, যেসব শব্দ চয়ন করেছে। এটা নিয়ে আমরা লজ্জাবোধ করছি। ক্যাডার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসাররা এমন ভাষায় কথা বলছেন, আমরা তো আর শ্রমিক নেতা নই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চাওয়া পাওয়া থাকতে তবে আমরা চাই একটা জনবান্ধব প্রশাসন যাতে হয়। যার যার কাজ সে করে যাতে জনগণকে উপযুক্ত সেবাটা দিতে পারে। আমরা এখানে অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার কিছু দেখছি না। আশা করি সরকার আমাদের সঙ্গে কথা বলবে।’

আরও পড়ুন

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে তিনটি- যার যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্যাডারকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দিতে দিতে হবে। উপসচিব পদটি কোনো ক্যাডারের নয়, ২০২৪ সালে তারা এটা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে। সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) অনুযায়ী, মেধার ভিত্তিতে সব ক্যাডার থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।’

খসড়া সুপারিশ জানানোয় এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সংস্কার কমিশনকে দায়ী করছেন সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কমিশন তাদের চিন্তা-ভাবনা না জানালেই ভালো করতেন। তাহলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তারা মনে করছেন বাংলাদেশের প্রশাসনে নানা সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে। সেগুলো দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারতে সিভিল সার্ভিসের নামগুলো চিন্তা করেন, সেখানে আছে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (আইএএস), ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস), ইন্ডিয়ান রেলওয়ে সার্ভিস (আইআরএস)। পাকিস্তানে আছে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), পুলিশ সার্ভিস অব পাকিস্তান (পিএসপি)। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা ২৭টি ক্যাডারের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কী করলাম, বিসিএস ব্র্যাকেট আনসার, রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপি (জিয়াপন্থী), আওয়ামী লীগ (মিজানপন্থী), ছাত্রলীগ ওই পন্থি। নামের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রতা বাদ দেওয়ায়, সব গন্ডগোল ওখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতে সিভিল সার্ভিসকে দলীয় বিবেচনায় ব্যবহার করা, রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা এবং আত্মীয়করণ ও দুর্নীতিকরণ করা মূল সমস্যা। তারপর আমরা এই কাজটি করলাম, ব্র্যাকেট বন্দি করলাম। এতে সবাই মনে করছে আমিও তো বিসিএস, তার চেয়ে কম কিসে।’

‘আগে যে উপসচিব পদে নিয়োগে ৭৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ কোটা ছিল ওটাই অন্যায় ছিল। এখন ৫০ শতাংশ করে করার কথা বলা হচ্ছে। প্রশাসনের কেন ৫০ শতাংশ থাকবে। প্রশাসন ক্যাডারে যে যোগ দিয়েছেন তার যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে সে পদোন্নতি পাবে, সে ভাগ করবে কেন। এখানে কোটা থাকা উচিত নয়।’

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সরকারের কঠোরতায় নমনীয় দু’পক্ষ
পূর্ত ভবনে ২৫টি ক্যাডারের নেতাদের মতবিনিময়-ফাইল ছবি

শহীদ খান বলেন, একটি ক্যাডারে প্রবেশের পর একজন কর্মকর্তার যে ট্রেনিং হয়, তিনি যা যা শেখেন, সেটা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুসারে হয়। হঠাৎ করে তাকে অন্য পজিশনে বসালে তো সে কাজ করতে পারবে না। একজন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তাকে হঠাৎ করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বানালে তিনি কাজ করতে পারবেন না। তার ক্যাডারে তার সেই পদোন্নতির সুযোগ থাকতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়াররা জেনারেল ক্যাডারে আসে। এটারও সংস্কার হওয়া দরকার। তারা এভাবে জেনারেল ক্যাডারে আসতে পারবে কিনা।

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাজটা হলো জেনারেল ম্যানেজমেন্ট, বাজেটিং, মনিটরিং, এজন্য কাউকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কী সব ডাক্তার থাকতে হবে? তাহলে তো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব সশস্ত্র বাহিনীর লোক থাকবে।’

একটি ক্যাডারে প্রবেশের পর একজন কর্মকর্তার যে ট্রেনিং হয়, তিনি যা যা শেখেন, সেটা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুসারে হয়। হঠাৎ করে তাকে অন্য পজিশনে বসালে তো সে কাজ করতে পারবে না। একজন মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তাকে হঠাৎ করে তাকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বানালে তিনি কাজ করতে পারবেন না। তার ক্যাডারে তার সেই পদোন্নতির সুযোগ থাকতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়াররা জেনারেল ক্যাডারে আসে। এটারও সংস্কার হওয়া দরকার। তারা এভাবে জেনারেল ক্যাডারে আসতে পারবে কিনা।—আবু আলম মো. শহীদ খান

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিরোধিতা করে এ সাবেক আমলা বলেন, ‘আগুনে ঘি ঢালার দরকার নেই। আগে আগুন নিভাতে হবে। আগুন কোথায় কোথায় জ্বলছে আগে সেটা চিহ্নিত করি। আগুন নেভানোর পর ঠিক করি কোন কোন পথে গণকর্মচারীদের স্টিল ফ্রেম গণকর্মচারীতে রূপান্তর করতে পারবে।’

সংস্কার কমিশনকে আরও ভালোভাবে বিবেচনা করে আরও গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্কারের এ বিষয়গুলো এ মুহূর্তে কী খুব দরকারি ছিল। এখন নির্বাচন নিয়ে লোকজন ব্যতিব্যস্ত। নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে নির্বাচনটাকে সুন্দর করা যায়। ভয়হীনভাবে মানুষ ভোট দিতে পারবে। এটা হলো মূল। এখন এটা মূল এজেন্ডা নয়।

আরও পড়ুন

শহীদ খান আরও বলেন, সংস্কার প্রয়োজন, আমরা ৫৪ বছরে কোনো সংস্কার আনিনি। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। দেড়-দুই বছরের মধ্যে এ সরকার সব সংস্কার করে ফেলবেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই এখন নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো বেশি প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের যে প্রশাসন ব্যবস্থা সেখানে প্রশাসন ক্যাডারকেই বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, এটা রাজনৈতিক কারণেও। অন্য ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলেও তাদের সেভাবে প্রভাব নেই। তারা অবহেলিতও।

সমস্যাটি খুব সহজে নিরসন হওয়ার নয়। আগেও প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা আন্দোলন করেছেন। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে। তাই রাতারাতি এ সমস্যা সমাধান হবে না। প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার আনার জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যেটা রাজনৈতিক সরকারই পারে।—ড. সাদিক হাসান

তিনি বলেন, ‘উপসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে সমস্যাটি বহু পুরোনো। এ সমস্যাটি যতটা না লজিক্যাল, এর চেয়ে বেশি হচ্ছে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে এটা হচ্ছে।’

‘সমস্যাটি খুব সহজে নিরসন হওয়ার নয়। আগেও প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা আন্দোলন করেছেন। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে। তাই রাতারাতি এ সমস্যা সমাধান হবে না। প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার আনার জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যেটা রাজনৈতিক সরকারই পারে।’

আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব, সরকারের কঠোরতায় নমনীয় দু’পক্ষ
মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা-ফাইল ছবি

সাদিক হাসান বলেন, ‘এ পর্যায়ে এসে সংস্কার কমিশনের তাদের খসড়া সুপারিশগুলো শেয়ার করার প্র্যাকটিক্যাল হয়নি বলে মনে করি। তারা জানেন যে একটা দ্বন্দ্ব কিন্তু অনেক দিন ধরে চলে আসছে। এ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আমরা পড়াইও। তাই তাদের চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করা বাস্তবধর্মী হয়নি। তারা তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সুপারিশগুলো দিতে পারতেন।’

‘আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব এতদিন ধামাচাপা ছিল, সেটা আবার বের হয়ে আসলো। সংস্কার কমিশন সংস্কার করতে পারলো কি পারলো না, তারা কিন্তু দ্বন্দ্বটা নতুন করে উসকে দিয়েছে, এটা বলা যায়’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক।

আরএমএম/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।