কাজী নজরুলকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন
বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান প্রজ্ঞাপনে সই করেন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি সবার অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি এরই মধ্যে বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য। এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। তবে কবির ঢাকায় আসার দিন থেকে তাকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেওয়ার একটা দাবি ছিল বাংলাদেশের জনগণের। এবার সেই স্বীকৃতি দিয়ে সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলো।
আরও পড়ুন
- কাজী নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট প্রকাশের অনুমোদন
কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে গেজেট জারির উদ্যোগ
কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে আসে তৎকালীন সরকার। তার বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট এই চির বিদ্রোহী কবির জীবনাবসান হয়। জীবনাবসানের পর কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
কবির প্রয়াণে দুইদিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করে বাংলাদেশ। পরবর্তীকালে তাকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার আলবার্ট হলে গোটা বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস. ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ ও ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টারাও কবিকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুল সর্বজনস্বীকৃত হলেও এর আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
অবশেষে জনপ্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ৪ মে তারিখ থেকে কাজী নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
আরএমএম/এমকেআর/জেআইএম