নির্বাচনকে প্রশ্নাতীত করতে সব ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই করা হবে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে বা প্রশ্নাতীত করতে সব ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই করা হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

২০০৯ সাল থেকে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের তথ্য যাচাই করবেন কি না- এমন প্রশ্নে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, পুরো ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ১২ কোটিরই ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। এ বছর যেটা হালনাগাদ হচ্ছে, সেটা যদি কেউ দেখতে চায় সেটাও হবে এবং আগেরটাও হবে। পুরো ভোটার তালিকাই প্রকাশিত হবে। তবে পুরো ভোটার তালিকা থাকবে আমাদের হাতে। আর ১৮ লাখ ভোটারের তালিকা থাকবে প্রকাশিত।

তিনি জানিয়েছেন, নতুন করে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। এতে দেশে মোট ভোটার বেড়ে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জনে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রত্যেকের তথ্য নাকি যাদের তথ্য নতুন করে যুক্ত হয়েছে শুধু তাদের তথ্য হালনাগাদ হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন অতীতে বিতর্কিত ভোটার তালিকা হয়েছে। এখন কোন বছরের তালিকায় বিতর্ক আছে এটা তো আমরা জানি না। আমরা যদি পুরো তালিকা যাচাই না করি তাহলে কী করে সেটা বের করবো? যাদের বয়স গতকাল (১ জানুয়ারি) ১৮ বছর হয়ে গেছে, তারা যদি তালিকাভুক্ত না-ও হয়ে থাকেন এবং আমাদের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তালিকাভুক্ত হন তারা ভোট দিতে পারবেন।

‘এছাড়া এবছর যাদের ১৮ বছর বয়স হবে, তারা ভোট দিতে পারবেন কি না সেটা আইনি ব্যাপার। ভোটার তালিকা আইন ধারা-৩ এর (জ) অনুযায়ী ভোটার হওয়ার যোগ্যতার তারিখ হচ্ছে ১ জানুয়ারি। এটা যদি করতে হয় তবে আইন পরিবর্তন করতে হবে। আইন পরিবর্তন করবো কি না সেটা আমরা ভাবছি।’

ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার করছেন তারা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে কি না এবং আইন সংশোধন করে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না- এমন প্রশ্নে এই কমিশনার বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে বলেছেন যে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন উনি আশা করছেন। আমাদের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর জন্য সবসময় প্রস্তুত। ভোটার তালিকা প্রণয়নও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকাকে সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নেই।

ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর করার বিষয়ে কমিশন কী ভাবছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৭ বছর বয়সে ভোটার হওয়া নিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা উনার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। আমরা সেটা শুনেছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কোনো মতৈক্য হয়, কোনো সিদ্ধান্ত আসে, যদি সংবিধানে পরিবর্তন আসে, আমরাও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

বিভিন্ন মহলে বলা হচ্ছে ভোটার তালিকা সঠিক নয়, আজ যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করলেন তা সঠিক কি না জানতে চাইলে সানাউল্লাহ বলেন, বিতর্কিত ভোটার তালিকা আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় দেখেছি। আপনারা আলোচনা করেছেন এবং আমাদের সাধারণ মানুষদের মাঝেও এ ধরনের একটা পারসেপশন আছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি যাচাই করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যই হলো এটির সুরাহা করা।

‘একটি শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কমিশন কনফিডেন্ট মনে করছে না। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করতে হবে। ভোটার তালিকা নিয়ে যে বিতর্ক ও শুদ্ধতার অভাব সেটা মূলত তিনটি কারণে হচ্ছে। প্রথম মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া, দ্বিতীয়ত দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর তৃতীয়ত বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়া।’

তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা একাধিক ঘটনা দেখেছি। চট্টগ্রাম এলাকায় রোহিঙ্গারা যেন ভোটার হতে না পারে সেজন্য একটা বিশাল ব্যবস্থাপনা আছে এবং ওই এলাকাকে ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করে আলাদাভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ কড়াকড়ি থেকে বাঁচতে ৩০ জন রোহিঙ্গা নীলফামারী সদরে গিয়ে ভোটার হয়ে যান। এগুলোর প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। এভাবে আমাদের ভোটার তালিকা বিতর্কিত হয়েছে।

আবুল ফজল সানাউল্লাহ আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে অনেক সময় নিজের পক্ষের ভোটারদের বয়স বাড়িয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়। আবার কাউকে কাউকে ১৮-১৯ বছর বয়স হলেও তালিকাভুক্ত হতে দেওয়া না। আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। আমরা ভোটার তালিকা নিয়ে একটা সন্তুষ্টির জায়গায় পৌঁছাতে চাই।

আরও পড়ুন

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে ওভারলেপিং হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তা মনে করছি না। কারণ সংস্কার কমিশন যে সংস্কার প্রস্তাবই দেন না কেন একটা ভোটার তালিকা তো লাগবে। ভোটার তালিকা ছাড়া তো আর ভোট হবে না। আমরা মনে করি না যে ভোটার তালিকা রিলেটেড আমরা কোনো সমস্যা ফেস করবো।

নির্বাচন কমিশনের মাঠ কার্যালয়গুলোতে প্রচুর ভোগান্তি হয়। এ ধরনের ভোগান্তি নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সানাউল্লাহ বলেন, মাঠ পর্যায়ে এনআইডি সেবায় যথেষ্ট ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নাগরিকরা তাদের বৈধ সেবা পান। তবে এ কথাটাও সত্য এসব আবেদনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবেদন রয়েছে যারা প্রতারণার আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। তাদের জন্য যেন নাগরিকরা ভোগান্তিতে না পড়েন এজন্য আমরা আরও ভালো পদ্ধতি নিতে যাচ্ছি।

২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে, এ কার্যক্রম কতদিন চলবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে ৩০ জুনের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে পারবো।

এমওএস/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।