প্রতিবেদন
দেশে বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১৮০ প্রাণহানি
২০২৪ সালজুড়ে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা গেছেন এক হাজার ১৮০ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে শুধু জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এক হাজার ১৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন
- কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতন, যেমন ছিল আদালত অঙ্গন
- বছরের প্রথমদিন পাঠ্যবই দিতে না পারার ‘ব্যর্থতা’ ঢাকতে কৌশল!
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৪৩ জন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
২০২৪ সালে অন্তত ১৬ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার দেখানো হলেও একজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন ও গুলিতে এ সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা
২০২৪ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ১১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ জন নিহত এবং ৮৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ২৮টি মন্দির, ৩১টি প্রতিমা, ২৮৪টি বসতবাড়ি এবং ২৪০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা
২০২৪ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর ৩০৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং ৭২৬ জন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৫৯ জন, লাঞ্ছনার শিকার ৫৯ জন, গ্রেফতার ১৯ জন এবং ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
এ বছরে এক হাজার ৪৯৮ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫৭ জন, যার অর্ধেকের বেশি শিশু। যৌতুকের জন্য নির্যাতনে শিকার হয়ে ৪৮ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চার হাজার ৩০০ জন, যাদের মধ্যে ৬৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
নির্বাচনী সহিংসতা ও গ্রেফতার
২০২৪ সালে নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৩৮ জন এবং প্রায় ৭৫২টি ঘটনায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে এক হাজার ৩৮৩টি মামলায় ৬৬ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন
আরএইচএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। মাত্র দুই মাসে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসেও এমন ঘটনা আর নেই। এসময় এমন কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নেই যা ঘটেনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এইচআরএসএসের প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন এইচআরএসএসের জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাড. মনিরুজ্জামান ও ডকুমেন্টেশন অফিসার জবা ইয়াসমিন প্রমুখ।
এসআরএস/এমকেআর