পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি: ডিএমপি কমিশনার
পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন না হলে উচ্চশিক্ষা অর্জনেও লাভ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, নিজে পিএইচডি-ব্যারিস্টার হয়েও যদি পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হয়, ফোর্সের সঙ্গে ব্রিজ সৃষ্টি না হয়, তাহলে এত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও আমরা কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারব না।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মরত সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনি যে লেখাপড়া করছেন তার জন্য অনেক কষ্ট করেন, রাত জাগেন। এই শিক্ষা নিজের সহকর্মীদের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। পুলিশে এখন অনেক পিএইচডি ও ব্যারিস্টার। এত পিএইচডি-ব্যারিস্টার প্রয়োজন আছে?
তিনি আরও বলেন, আমি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অফিসার ও সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্রিজ সৃষ্টির জন্য যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডিএমপির জুনিয়র অফিসারদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছি।
রেশনের কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কয়েকদিন আগে আপনাদের (অবসরপ্রাপ্ত) সারিতেই ছিলাম। আজকে এখানে। আবার কিছুদিন পরে কিংবা যেকোনো মুহূর্তে আবার অবসরপ্রাপ্তদের সারিতে মিলিত হব। রেশনের কোনো অগ্রগতি নেই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অত্যন্ত কঠিন। সেখান থেকে বের হয়ে এসে রেশন পাওয়া অনেক জটিল হবে। আমি আইজিপিকে অনুরোধ করেছি কাজটি হাতে নেওয়ার জন্য। রেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন
কমিশনার বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। আপনি চাকরিকালীন যেভাবে ছিলেন এখন সেভাবে থাকতে পারবেন না। ফ্ল্যাট, বাড়ি কিংবা কিছু করতে গেলে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেই সকল জটিলতা নিরসনে আমি এই চেয়ারে যতদিন আছি আপনারা আমার কাছে আসবেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সমস্যা সমাধানের।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এরূপ পুলিশ এদেশের মানুষ দেখতে চাননি। আন্দোলনে হাজার ছাত্র-জনতার মৃত্যু দুঃখের কাহিনী রচনা করেছে। আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। কী কারণে মানুষের এত ক্ষোভ পুলিশের ওপর? জুলাই-আগস্টের ঘটনা আমাদেরকে সামাজিকভাবে অনেক নিগৃহীত করেছে। এখন পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের অনুষ্ঠানগুলোতে যেয়ে নিজেদেরকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এই ট্রমা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে আসার জন্য একটিই উপায়, তা হলো মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হবে। সেবাদানের মাধ্যমেই একমাত্র পুলিশের হারানো ইমেজ বা গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ্।
৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা আগেও যদি তখনকার নেতৃত্বে থাকা পুলিশ অফিসাররা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা হতো। পাশপাশি পুলিশ সদস্যদেরও জীবন রক্ষা হতো। কিন্তু এরূপ সিদ্ধান্ত তখন নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে পুলিশে গত ১৫ বছরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা কী এমন করলেন যে এদেশের মানুষ পুলিশের প্রতি এত তিক্ত-বিরক্ত হলো? যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হলো, শত শত সহকর্মী নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত হলেন। সঙ্গে পুলিশের থানা, ফাঁড়ি, অস্ত্র লুট হয়ে গেলো। পুলিশের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা বা নিতে পেরেছেন কিনা সেই বিবেচনা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
টিটি/এএমএ/জেআইএম