টোলপ্লাজায় নিহত ৬: সেই বাসচালক গ্রেফতার
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘাতক বাসটির চালক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ঘাতক বাসটির চালক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনকে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর বাসচালক আত্মগোপনে সিদ্ধিরগঞ্জ লুকিয়ে ছিলেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে একই পরিবারের চারজনসহ দুটি গাড়ির ছয় আরোহী নিহত ও চারজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।
আরও পড়ুন
- টোল প্লাজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিন গাড়িকে বেপরোয়া বাসের ধাক্কা
- কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় নারী নিহত
নিহতরা হলেন- মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নন্দনকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও দুর্ঘটনাকবলিত প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলমের স্ত্রী আমেনা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (২৪), ছোট মেয়ে রিহা মনি (১১), ইসরাত জাহানের ছেলে আইয়াজ হোসেন (২), মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২৬) ও তার ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৭)।
আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন প্রাইভেটকারের মালিক নুর আলম (৪২), তার বোন ফাহমিদা আক্তার (১৭), প্রাইভেটকারের চালক হাবিবুর রহমান (৩৮) ও মোটরসাইকেলের চালক সুমন মিয়া (৪২)।
সিসি ক্যামেরাতে ফুটেজে যা দেখা গেছে
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ধলেশ্বরী টোল প্লাজার মাওয়ামুখী লেনে একটি মোটরসাইকেল টোল পরিশোধের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। এর পেছনে একটি মাইক্রোবাস দাঁড়ায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় আরও একটি প্রাইভেটকার। অল্প কিছুক্ষণ পরেই বেপরোয়া গতিতে বেপারী পরিবহনের একটি বাস দ্রুত টোল প্লাজার দিকে আসতে থাকে। টোল প্লাজার সামনে এলে বাসের গতি আরও বেড়ে যায়। এসময় বাসটি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলকে দুমড়ে-মুচড়ে টোল প্লাজার বাইরে নিয়ে যায়।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’। পরিকল্পিতও হতে পারে, আবার না-ও হতে পারে। তারা বলেছেন, যদি পরিকল্পিত না হয়, বাসটি যদি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থাকে, তাহলে যাত্রীদের বাঁচাতে টোল প্লাজার অন্য কোথাও আঘাত করতে পারত। বাসের গতিও স্বাভাবিক থাকত। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন তারা।
আরও পড়ুন
শুক্রবার দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় আহত ব্যক্তিদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় ১০ জনকে এ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচজন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের মধ্যে গুরুতর আহত রেশমাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছিল। পরে তারা জানতে পারেন, শুক্রবার বিকেলে সেখানে রেশমার মৃত্যু হয়।
টিটি/এমকেআর/এএসএম