প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সভা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের প্রতিবাদ সভা

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা পুনর্বিন্যাসের খসড়া সুপারিশের বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদ সভা করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ সভা করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।

প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর কমিশনের খসড়া সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে বড় ধরনের জমায়েত করেছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

আজকের প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার সভায় উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করা হবে।

বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

প্রতিবাদ সভায় কমিশনের খসড়া সুপারিশকে বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না এটাও আমাদের দেখতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ সূচনা বক্তব্যে বলেন, গত ১৫-১৭ বছর ধরে জনপ্রশাসনের বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার দলীয় আচরণের কারণে আমাদের ইমেজ সংকটজনক অবস্থায় চলে গিয়েছিল। দেশের কতিপয় কর্মকর্তার কারণে যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে সেখান থেকে উত্তরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিব এবং ঢাকার ডিসির সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আগামীকাল বৃহস্পতিবার সভা করবে। মতামত নিতে আমরা আপনাদের এখানে ডেকেছি। আপনাদের মতামতের আলোকে আমরা সংস্কার কমিশনে গিয়ে কথা বলবো।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, আমার পুলিশ সংস্কার কমিশনে কথা বলার সুযোগ হলেও, প্রশাসন সংস্কার কমিশনে কথা বলার সুযোগ হয়নি। এটা এ কমিশনের একটা বড় দুর্বলতা। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। অতীতে এমন বহু রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত ছিল। এ কমিশনের রিপোর্টও আঁস্তাকুড়ে পড়ে থাকবে, সেটা কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সোহেল রানা বলেন, আমরা অনেকগুলো ডিসকোর্স বাইরে শুনতে পাচ্ছি। যেগুলো মানুষকে প্রভাবিত করছে। উপসচিব পদে ৫০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ কোটা কেন বৈষম্যমূলক সেটার ব্যাখ্যা না থাকলে তাদের মধ্যে ভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমরা (প্রশাসন ক্যাডার) যেটা বলছি বৈষম্যমূলক, তারা (অন্য ক্যাডার) বলছেন আমরা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, আমাদের মধ্যে রাজনীতি আছে। এ অঞ্চলে ফ্যাসিজম ছড়িয়েছে, এটা কি একটি ক্যাডারের দায়? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিতে হবে। নির্বাচনের সময় কি শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেছে, সে প্রশ্নের উত্তরও দিতে হবে।

তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ২৫ ক্যাডার, আমরা একে অপরের পরিপূরক, ২৫ ক্যাডারের কেউ কি নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করেনি। ২৫ ক্যাডারের কোনো আওয়ামী লীগপন্থি অ্যাসোসিয়েশন ছিল না? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

‘কোন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে বেশি জড়িত তা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। যদি এমন হয় শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বাকি সব ক্যাডার তুলসিপাতা, তখন আমরা বলতে পারি আপনার প্রশাসন ক্যাডারের ওপরে আপনারা যেটা করছেন সেটা ঠিক আছে।’

সোহেল রানা বলেন, এখন কথা হচ্ছে- সংস্কার প্রতিহিংসা ও সংখ্যার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে কি না। সংস্কারের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্র ও জনকল্যাণ, তো জনকল্যাণ কোথায় আছে? রেলিভেন্ট পিপল রেলিভেন্ট এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে উপসচিব হবে না, মেধার ভিত্তিতে এগিয়ে থেকে তারা উপসচিব হবে না। যাদের সঙ্গে রেলিভেন্স কম তাদের উপসচিব বানাতে হবে, এটাই কি রাষ্ট্রের কল্যাণ, জনকল্যাণ।

১৮৫৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ে চালিয়েছে জানিয়ে এ সিনিয়র সহকারী সচিব বলেন, আমাদের ট্রেনিং, স্পেশালাইজেশন, মেধা- সবকিছু বলে উপসচিব আমাদের পদ। তাহলে কেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা শতভাগ উপসচিব পদ পাবে না। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কেন গুরুত্ব দিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা হবে না।

তিনি বলেন, আমরা যে বলছি ষড়যন্ত্রমূলক, এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। রাষ্ট্রকে দুর্বল করার কোনো প্রচেষ্টা চলছে কি না। যৌক্তিক বিষয়কে উপেক্ষা করে অযৌক্তিক কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে কি না, সেটাও দেখতে হবে।

আরএমএম/বিএ/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।