এনআইডি সংশোধনে পৌনে ৪ লাখ আবেদন, দ্রুত সমাধানে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৮ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
এনআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এএসএম হুমাযুন কবীর

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এএসএম হুমাযুন কবীর বলেন, এনআইডি সংশোধনের জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ আবেদনগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) এনআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিজি এএসএম হুমাযুন কবীর বলেন, ইসি থেকে আমরা ডাটা সেন্টার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকি। আমাদের কিছু নিয়মকানুন আছে। আমরা ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির ভিত্তিতে সেবা দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গেও আমাদের একটা চুক্তি ছিল।

গত ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর নিবন্ধনের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত যাচাইয়ে ইসির সঙ্গে বিসিসির দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। শর্তানুযায়ী, এনআইডি সার্ভারের তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সত্তা বা পক্ষকে হস্তান্তর করতে পারবে না, অথবা বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দিতে পারবে না। এই শর্ত ছিল। কিন্তু বিসিসি সেটা লঙ্ঘন করেছে। এজন্য ইসি থেকে প্রথমে কারণ দর্শানো হয়। দীর্ঘদিন তারা কোনো জবাব দেয়নি, নীরব ছিল।

পরবর্তীতে ৬ অক্টোবর তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলে বিসিসি একটা জবাব দেয়। তবে যা জানতে চাওয়া হয়েছিল সুনির্দিষ্টভাবে, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। এজন্য ইসি জবাবটি গ্রহণ করেনি। যেহেতু তারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল এবং চুক্তিতে বলা ছিল, এ চুক্তি লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন চুক্তি বাতিল করতে পারবে। তারই ধারাবাহিকতায় চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

একই সঙ্গে তাদের যে এপিআই (এনআইডি যাচাইয়ের লিংক) সংযোগটি ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিষয়টা ছিল বকেয়া থাকলেও চুক্তি বাতিল করার শর্ত ছিল। তারা বকেয়াও পরিশোধ করেননি পুরোপুরি। দ্বিতীয় চিঠি দেওয়ার পর তারা কিছু বকেয়া পরিশোধ করেছিল। কিন্তু এখনো একটা বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া আছে। এ দুই কারণে চুক্তি বাতিল করেছে।

বিসিসি তৃতীয় পক্ষকে তথ্য দেওয়া প্রক্রিয়ায় ইসির কিছু কর্মকর্তা সম্পৃক্ত ছিল, ডিজিকনের হাতে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না। এছাড়া ডিজিকন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রয়েছে, তারা আপনাদের এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কি না, যে সরকারি কাজ বা তাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তি বাতিল হয়েছে। এখন যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের তো বাঁচবার আসলে কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কেউ অফিসিয়ালি সেবা বন্ধ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোর কেউ কোনো অসুবিধার কথা জানায়নি।

তিনি বলেন, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসির চুক্তি ছিল। কিন্তু যখন বিসিসি পরিচয়ের সূত্রধরে তারা নিজেদের মতো করে একটি সেবা চালু করে, যেখানে ইসির কোনো সমর্থন ছিল না৷ তা সত্ত্বেও তারা আমাদের সঙ্গে ছিল এমনও কিছু প্রতিষ্ঠান ওখানেও চুক্তি করে। এইটা আমাদের কাছে এখনো বোধগম্য নয়। কারণে যেখানে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করলে স্বল্প পয়সায় সেবা পাওয়া যায়, সেখানেও বেশি পয়সা ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি৷ তারপরও তারা ওখানে কেন করেছে সেটাও কিন্তু একটা বিশাল বিষয়। আমার ধারণা যে, সম্ভবত এখনো যারা দুই বছর জায়গায় চুক্তি করেছে তাদের যেহেতু আমাদের এখান থেকে সেবা নিতে অসুবিধা নেই, তাই তারা সমস্যায় পড়ছে না।

এছাড়া চুক্তি বাতিল করলেও তো তাদের কাছে এনআইডি সার্ভারের তথ্য থাকছে, এমন বিষয় সামনে আনলে তিনি বলেন, আমাদের যে সিস্টেমটা কাজ করে, এখানে অনেক তথ্য আছে। ভোটার তালিকায় বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে এনআইডি তথ্য ভাণ্ডার। আর ওদের সব তথ্য প্রয়োজন হয় না। কাউকে তিনটা, কাউকে চারটা এভাবে তথ্য দেওয়া হয়। এর সাথে যে ধরনের চুক্তি আছে, আমরা সে রকম তথ্য দিয়ে থাকি। বিসিসিকেও চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তারা তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে পেরেছেন কি না সেটা আমরা নিশ্চিত নই।

চুক্তির আগে নয়, কোটি মানুষের তথ্য তারা নিয়েছেন, এ ঘটনায় আপনারা কোনো মামলা করবেন কি না, আর কত টাকা বকেয়া আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বকেয়া আছে দুই কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৭ টাকা। সেটা সরকারের কোষাগারে দেওয়ার কথা ছিল। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা দিতে বলেছিলাম চিঠিতে। নয় কোটির বিষয়টি জানা নেই। ইসির কাছেও এই তথ্যটা নেই। বিসিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ইসিও সরকারি প্রতিষ্ঠান। যেহেতু চুক্তি বাতিল ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তার মানে ইনটেনশনটা বুঝতে পারছেন। তারা তথ্যভাণ্ডার করে থাকলে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেটাই নেওয়া হবে।

অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এনআইডি দুর্নীতি রোধ করতে যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি তিন মাস পরে, আশা করি ভোগান্তি থাকবে না। আপনারা আমাদের সজাগ রাখবেন, আমরাও সজাগ থাকবো।

এমওএস/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।