রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ফাইল ছবি

সীমান্তে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে এবং এটিকে আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, সীমান্তে প্রচুর দুর্নীতি আছে, এটি সত্য, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রোহিঙ্গারা দুর্নীতির মাধ্যমে ঢুকছে। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তারা যে কোনো একটি সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে, বিষয়টি এমনও না, বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে। এটিকে আটকানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাংলাদেশ তাগিদ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান। সম্প্রতি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন ও লাওসের মধ্যে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আরও পড়ুন

নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কার কথা বলছেন কেউ কেউ। তবে এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না, রোহিঙ্গাদের আরেকটি ঢল আসবে; যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এ আশঙ্কা আমাদেরও আছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সেই ঢল আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সভার বরাত দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারকে বলেছি, বর্ডার তোমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমরা তো রাষ্ট্র হিসেবে নন অ্যাক্টর (আরাকান আর্মি) যারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারি না। কাজেই তোমাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধান করবে।

সভায় আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মূল বিষয় ছিল তিনটি। সীমান্ত সমস্যা; মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বর্তমান অবস্থা। তবে সবাই মিয়ানমারের চলমান সংকটের সমাধান চেয়েছেন।

jagonews24

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসারের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে, লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুয়েমেস্কেই কোমাসিথ, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাউজু নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

গত দুই মাসে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের তথ্য সভায় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান ছিল, আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেবো না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায় যে, আমাদের আর কিছু করার থাকে না। সেরকম পরিস্থিতিতে আমরা নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঢুকতে দিয়েছি, তা-ও না। তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছে।

আরও পড়ুন

সীমান্ত ইস্যুতে সভায় আলোচনার বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, সীমান্তের ব্যাপারে প্রধানত উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে বেশি কথা হয়েছে। এছাড়া পশ্চিমের সীমান্ত; যেখানে আমাদের স্বার্থ আছে, সেটি নিয়েও কথা হয়েছে। সীমান্তে কতগুলো স্ক্যাম সেন্টার গড়ে উঠেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলো নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়। এছাড়া মাদক তো আছেই। অপরাধ এবং বর্ডার ইস্যুতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

তৌহিদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে (সভায়) অন্য দেশগুলোর যতটা না উদ্বেগ ছিল, তারচেয়ে বেশি ছিল অন্যান্য ইস্যুতে। ভবিষ্যতের অশনিসংকেত যেগুলো আছে সেগুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল করেছি। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে আপনারা যে শান্তি বা স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করছেন; এটি কোনোদিন সম্ভব না।

আইএইচআর/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।