১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিলো ঢাকা জেলা প্রশাসন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫২ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিলো ঢাকা জেলা প্রশাসন/ছবি-সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবসে ১৩৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। প্রথমে ফুল দিয়ে আমন্ত্রণ এবং পরে প্রাইজমানি তুলে দিয়ে তাদের সম্মানিত করা হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ প্রধান অতিথি ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. ফুয়ারা খাতুন স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শোয়েব শাত-ঈল ইভান ও সহকারী কমিশনার নুসরাত নওশীন সঞ্চালনায় স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বক্তব্য দেন।

এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমদ বলেন, অত্যাচারের মাত্রা যখন বাড়ে, তখন সে এটাকে নিজের সফলতা বলে মনে করে। একই সঙ্গে অত্যাচারের মাত্রা যখন বাড়ে, তখন মানুষের প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষাও বাড়ে। এখান থেকে জন্ম নেয় মুক্তিযুদ্ধ। এখান থেকে গণঅভ্যুত্থান। জার্মান দার্শনিক হেগেল বলেন, ‌‘সংঘাতের মাধ্যমেই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। যখন ন্যায় ও অন্যায়ের সংঘর্ষ হয়। অন্যায় পরাভূত হয়। এর মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়’। এ রকমই সংঘর্ষের নাম মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান। 

jagonews24

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে উদ্দেশ্য যুদ্ধ করেছে, যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। সমাজটা সুন্দর হবে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে, সমস্ত অন্যায় খতম হবে, কেউ কারো প্রতি অন্যায় করবে না। সমাজে আইনের শাসন থাকবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করবে। মিলে মিশে বসবাস করবে। তাদের সে চেতনা পূরণ হয়নি। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা বাস্তবায়নে অনেক কাজ আমাদের বাকি রয়েছে। আজ এত বছর পরও আমাদের শুনতে হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য কেন আকাশ ছোঁয়া। সিন্ডিকেটের হাতে কেন সবকিছু জিম্মি। আইনশৃঙ্খলা অবস্থা কেন ভালো না। রাস্তাঘাটের মধ্যে কেন যানজট। এ সমস্যাগুলো দূর করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, পৃথিবীর যত পরিবর্তন, যত ইতিহাস সবকিছুতেই ছাত্ররা জড়িত। জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্ররা জেগে উঠে বিজয় এনে দিয়েছে। গুম, খুন সব কিছুই জন্য তারা লড়াই করেছে। রক্তচক্ষুর বাইরে থেকে আপনারাও যুদ্ধে নেমেছিলেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আপনারা সজাগ হন। নতুন প্রজন্মকে সামনে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেব। 

সংবর্ধনা নিতে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বলেন, একাত্তরে কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই দিনগুলোতে যদি সাধারণ জনগণ, ছাত্র জনতা ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হয়ে যেত। স্বাধীনতা পাওয়ার ৫৩ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছি। আবার অনেক কিছু করতে পারেনি। তবে যা অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। তা নাহলে যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে তারা শান্তি পাবে না। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়ার জন্য এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। এই দেশটা কলুষিত করে ফেললে আমরাই খারাপ থাকব। আমাদের অতিলোভ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা লুতফা হাসিন রোজী বলেন, শুধু কয়েকজন যুদ্ধ করেই স্বাধীনতা পায়নি। এই সাড়ে সাত কোটি মানুষ যোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে, তবে মুক্তিযুদ্ধের সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। গত ৫৩ বছর ধরে কোনো না কোনো স্বৈরাচারের শিকার হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ কখনই শেষ হয় না। যেকোনো ফরমেটে চলতে থাকে। আমরা শোষণহীন দেশ প্রত্যাশা করছি। 

এমএএস/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।