বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক
বাংলাদেশের সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটি অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক, প্যারিস চুক্তি ও জি-সেভেন এর নানান অঙ্গীকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এটি আমাদের নেট জিরো লক্ষ্যকেও খর্ব করে। জাপানের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় এ বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনাটি তৈরি করেছিল ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস, জাপান (আইইইজে)। তাদের সহযোগিতা করেছিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে 'বাংলাদেশ এনার্জি সমৃদ্ধি সম্মেলন ২০৫০' এর দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশে ন্যায্য রূপান্তরে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারত্বের ভূমিকা শীর্ষক এক অধিবেশনে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
সম্মেলনে জাপান সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটির (জেএসিএসইএস) প্রকল্প পরিচালক ইউকি তানাবে বলেন, এই মহাপরিকল্পনাটি বানানোই হয়েছে জাপানি কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিত করতে, এবং নিজেদের উদ্বৃত্ত এলএনজি এশীয় দেশগুলোর কাছে পুনরায় বিক্রির লক্ষ্যেই কেবল জাপান বাংলাদেশে এ ধরনের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিবেচনায় এই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটি মোটেও কার্যকর হবে না, কেননা এতে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ অ্যামোনিয়া এবং হাইড্রোজেন কো-ফায়ারিং ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে, এটি নবায়নযোগ্য শক্তির চেয়ে ৪ গুণ বেশি ব্যয়বহুল।
ইউকি আরও বলেন, এই আইইপিএমপি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়। এতে উন্নত প্রযুক্তির নামে মিথ্যা ও ব্যয়বহুল সমাধানের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এই অপরীক্ষিত প্রযুক্তিগুলো নবায়নযোগ্য শক্তির তুলনায় খুবই ব্যয়বহুল। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটির ব্যাপক সংশোধন প্রয়োজন এবং জাপানের উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জ্বালানি রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করা।
অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে হাইড্রোজেন এবং অ্যামোনিয়া প্রযুক্তিগুলো প্রয়োগ করা উচিত নয়।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনাটি যে সংশোধন করা উচিত, তা নিয়ে সম্মত হন ইচিগুচিও৷ বাংলাদেশ এনার্জি সমৃদ্ধি সম্মেলন ২০৫০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টাও এই সংশোধনীর কথা উল্লেখ করেছেন।
অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের সমন্বয়ক বারিশ হাসান চৌধুরী, অয়েল চেইঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের (ওসিআই) জাপান ফাইন্যান্স ক্যাম্পেইনার মাকিকো আরিমা অধিবেশনটি পরিচালনা করেন।
এনএস/এমএইচআর/জেআইএম