ড. ইফতেখারুজ্জামান

‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দুদকে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ড. ইফতেখারুজ্জামান//ফাইল ছবি

কমিশনের পদত্যাগে দুদকে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রয়োজনে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ অন্তর্বর্তীকালীন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে- দুদকে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু এটি ভ্যালিড। কারণ, ৫ আগস্টের পর থেকে যা চলছে, বলতে পারি সবই হচ্ছে আমাদের সংবিধান ও আইনপরিপন্থি। ‘ডকট্রিন অব নেসিসিটি’ বলে একটা বিষয় আছে। যে কারণে সবকিছু ভ্যালিড। কাজেই দুদকের জন্য যদি অন্তর্বর্তী কিছু করতে হয় সেটিও ভ্যালিড হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কাকরাইলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৪ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আরও পড়ুন

কমিশনের অনুপস্থিতিতে দুদকে স্থবিরতা ও সংস্কার কমিশনের পরামর্শ ছাড়া দুদক কমিশন নিয়ে এক ধরনের জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি প্রয়োজনে ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে’ দুদকে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা-ও বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা কথা বলছি যখন কমিশন নেই। তিনজন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাই তারা পদত্যাগ করেছেন।

কমিশনের পদত্যাগের মাধ্যমে দুদকে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উভয় সংকটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কেননা দুদক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। এক মাসের বেশি হয়ে গেছে কমিশনে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। যাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।

jagonews24

তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের যে ম্যান্ডেট তার শীর্ষ বিষয় আবার কমিশন নিয়োগ। সংস্কার কমিশন যে পরামর্শ দেবে তার সঙ্গে যদি দুদক কমিশন নিয়োগ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তাহলে আমরা আবার সেই একই অবস্থায় চলে যাব। এই যে উভয় সংকট এর সমাধান সরকারকে করতে হবে। কেননা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সরকারের উদ্যোগে। কোন পথ ভালো হবে সেটা সরকার ঠিক করবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, আমরা মনে করি এর মধ্যে একটা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। যার মাধ্যমে দুদককে ন্যূনতম অপারেশনাল জায়গায় নেওয়া যায়। যতদিন পর্যন্ত দুদক সংস্কার কার্যক্রম চালু হয় ততদিন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। আমরা যেন আবার একই চক্রে আবদ্ধ হয়ে না পড়ি।

আরও পড়ুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিকে দুদক দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছে। আমরা গবেষণা ও সংবাদমাধ্যমে এতদিন যা দেখে এসেছি, আজকে দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ধরনের তথ্য পাচ্ছি সেটি অত্যন্ত বিব্রতকর। যা এতদিন জেনেছি তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি অনিয়ম, অনাচার, বৈষম্য ও দুর্নীতি হয়েছে।

তারুণ্যের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের জন্য যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে তার শীর্ষে রয়েছে দুদক, যোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক সংস্কারে কার্যক্রম চলছে। এই সংস্কার দুদকের জন্য অবমাননাকর। পাশাপাশি দুদক ঢেলে সাজাতে সাঁড়াশি অভিযানের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, দুদক সংস্কারের প্রয়োজন হবে কেন? দুদক তো দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। এই প্রতিষ্ঠানে যারা নিযুক্ত হন, হোক না রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত হয়েছেন। আপনি যে মুহূর্তে দুদকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন; আপনার মনে কেন এই বোধটা জন্মায় না যে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে দুর্নীতি দমন করা। আপনি কেন দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। এই প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কেন করতে হবে। এর চেয়ে বড় অবমাননাকর দৃষ্টান্ত দুদকের জন্য আর কী হতে পারে।

এসএম/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।