বিচার চাইতে ট্রাইব্যুনালে যাবেন পিলখানায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা
১৫ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ‘সঠিক বিচার’ চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
হত্যাকাণ্ডের ‘প্রকৃত’ ঘটনা উন্মোচনসহ ‘পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিচার নিশ্চিত করতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের কথা জানিয়েছেন বিদ্রোহে শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়।
গত প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল ডিভিশনে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি শহীদ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই উল্লেখ করে সাকিব রহমান বলেন, মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময় আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী, যারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন ফাইল করব। বর্তমান সরকারের এতদিনেও আমাদের সময় দেওয়ার ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দেবে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব তারা গত সরকারের ক্ষমতায় ছিল।
সাকিব রহমান আরও বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এছাড়া তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনব।
তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভুঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।
পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সব মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। যারা হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার বিচার ও সমন্বয় সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে গাড়ি চাপা দিয়ে যদি হত্যাচেষ্টা হয় তাহলে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিও জানান তিনি।
শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী।
তিনি বলেন, গেজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করে এদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও দাবি জানান তিনি।
পিলখানা হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুনভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে নাহরীন ফেরদৌসী বলেন, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। এর আগের সব তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।
অফিসিয়াল গেজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডি উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটক নির্দোষ সব মানুষকে দ্রুত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
একইসঙ্গে ঘটনার দ্রুত বিচার শেষ করে আটক নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রুত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি করেন নাহরীন ফেরদৌসী।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ প্ররোচনায় ও নীলনকশায় শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরাসরি জানতেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন শহীদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।
টিটি/এমআরএম/জেআইএম