শহীদ রেহানের মা

ছেলের নিথর দেহ পড়ে ছিল মর্গে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৯:১৬ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ বুয়েট শিক্ষার্থী রেহান আহসানের মা ইফাত আরা বেগম ছেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ওইদিন রাত ১০টার দিকে আমার কাছে কল আসে রেহানের মাথায় গুলি লেগেছে। সারারাত খুঁজে কোথাও পাইনি ওকে। ফজরের দিকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে গিয়ে দেখি স্ট্রেচারে রেহানের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে।’

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই ডিপার্টমেন্টের আইএসি সেমিনার কক্ষে শাপলা চত্বরের গণহত্যায় শহীদ রেহান আহসান স্মরণে আয়োজিত শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন ইফাত আরা বেগম।

৫ মে’র স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ওইদিন সকালেই রেহান তার কয়েকজন বন্ধুসহ শাপলা চত্বরে গিয়েছিল। আমি বিকেলেও তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। ওর বন্ধুর মায়েরা বার বার আমাকে ফোন দিচ্ছিলেন, তারা তাদের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। আমি তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। পরে সারারাত তাদের সঙ্গে নিয়ে রেহানকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। ফজরের সময় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে গিয়ে দেখি ছেলের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার এত কষ্টের ধন, এভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে এটা কখনও ভাবিনি। ওর বাবা ওকে এত ভালোবাসতেন যে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক বছর তিন মাসের মাথায় তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে যান। একেতে ছেলের শোক, এর তিন মাসের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে মেয়েদের নিয়ে কোনোমতে টিকে আছি। রেহান যে ৫ মে মারা গেছে এই কথাটাও কাউকে বলতে পারতাম না। পুলিশের ভয়ে বলতে হতো, ও দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

শহীদ রেহানের মা, ছেলের নিথর দেহ পড়ে ছিল মর্গে, ৩ মাসের মাথায় চলে গেলেন ওর বাবাও

বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনুস আলী বলেন, আমরা দীর্ঘ ১১ বছর সবকিছু জেনেও রেহানকে স্মরণ করতে পারিনি, জেনেও চোখ বুঝে ছিলাম। এজন্য শহীদ রেহানের পরিবারের কাছে এবং তার বন্ধুদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। রেহান, আবরার এদের স্তর আসলে আমাদের থেকে অনেক ওপরে। ওরা যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন দিয়েছে, আমরা তাদের ধারেকাছেও যেতে পারিনি। আমরা চেষ্টা করবো সিএসই বিভাগে রেহানের নামে একটি বৃত্তি চালু করার এবং রেহানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে তার পরিবারকে আইনি সহযোগিতা করার।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আলামিন সিদ্দিক বলেন, বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী একটি পরিবারের, সমাজের এবং রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ। সেই সম্পদ যখন অকালে হারিয়ে যায়, আর সেই হারিয়ে যাওয়া যখন হয় মর্মান্তিক। সেই বিষয়ে বলার মতো ভাষা নেই। আমি রেহান আহসানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

এ ছাড়া শোকসভা বক্তব্য দেন সিএসই ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. রিফাত শাহরিয়ার, রেহান আহসানের বন্ধু তানভীর রহমান, রেহানের ছোট বোন, বুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রাশেদুর রহমান প্রমুখ।

এমএইচএ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।