আইন উপদেষ্টা
অংশীজনের সঙ্গে সভা করে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় নিয়ে সিদ্ধান্ত
অংশীজনদের সঙ্গে বড় পরিসরে সভা করে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ তথ্য জানান।
বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার বিষয় জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে। উনাদের চিঠিতে বলা হয়েছে মাসদার হোসেনের রায় কার্যকর করার জন্য পৃথক সচিবালয় দরকার। কিন্তু মাসদার হোসেন নিজে আমাকে বলেছেন, মাজদার হোসেন রায়ে পৃথক সচিবালয়ের কথা বলা নেই।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত, নিম্ন আদালত এবং স্টেক হোল্ডারদের নানান ধরনের মতামত রয়েছে। আমরা খুব বড় পর্যায়ে স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজনদের) সঙ্গে মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই আইনটি যাতে এ বছরের মধ্যে করে যেতে পারি, সেই চেষ্টা আমরা করছি।’
সরকারের বৈধতায় অধ্যাদেশ করা নিয়ে কথা হচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে একটি অধ্যাদেশ হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে পত্রিকা এমনভাবে লিখে দিয়েছে যে, চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কথাবার্তা চলছে, চিন্তা চলছে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
সংসদ সচিবালয় নিয়ে এক অধ্যাদেশ হয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হওয়ার পর তো আপনারা আমাকে স্পিকার বানিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার। কেউ কেউ তো আবার, যাই হোক আর বলতে চাই না। পরিষ্কার করে বলি- সংসদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম রয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সেটা কাউকে অর্পণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে কাউকে স্পিকার বানানো হয়নি।’
মিথ্যা মামলা করা ব্যক্তিদের শাস্তির আইন বের করবো
হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে নানান রকম প্রতিকার ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেছি। একবার সিদ্ধান্ত নিলাম সিআরপিসি পরিবর্তন করে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া হোক, উনারা এফআইআর করার আগে তদন্ত করবেন। তখন বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হলো- এটা করা হলে পুলিশকে দুবার স্বেচ্ছাচারিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন
- অপরিহার্য সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা
- আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে তারা গণশত্রু
‘যদি পুলিশ হয়রানি করে। এখন যেটা চিন্তা করছি এসপি, ডিসি, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তাদের নিয়ে কোনো কমিটি করা যায় কি না। এফআইআর করার আগে এই কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেবে। এটা আমাদের করতে হবে, কারণ আজ যারা হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা করছেন, বাণিজ্যমূলক মামলা করছেন। কাউকে কাউকে নাকি থ্রেটও দেওয়া হচ্ছে টাকা না দিলে মামলা করবেন। আপনারা শুধু মনে রাইখেন, আমি যদি এই মন্ত্রণালয়ে থাকি আপনাদের (মিথ্যা মামলা করা ব্যক্তি) কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায় সেটার আইন আমি খুঁজে বের করবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ট্রাইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে চাইবো। মামলার যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বন্দিকে ফেরানোর জন্য অনুরোধ করা যাবে।’
শেখ হাসিনার কাছে কর্মীদের জবাবদিহি চাওয়া উচিত
শেখ হাসিনার কল রেকর্ড ফাঁস করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো যদি সত্যিই উনার কনভারসেশন হয়ে থাকে তাহলে দেশকে অস্থিতিশীল করা, ষড়যন্ত্র করা, মানুষকে প্ররোচিত করা, উত্তেজিত করা ও বিভ্রান্ত করার উদ্দেশে করা হয়।’
‘অনেস্টলি বলছি, সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নয়, সাধারণ মানুষ হিসেবে বলছি- আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করা উচিত আপনি আপনার পরিবার নিয়ে কাউকে না জানিয়ে যেভাবে পালিয়ে গেলেন, আর আমাদের প্রতিনিয়ত উসকান বিক্ষোভ করার জন্য, উসকানিমূলক ও সন্ত্রাসমূলক কাজ করার জন্য, এ ব্যাপারে আপনার নিজের ব্যাখ্যা কী? উনি (শেখ হাসিনা) ওনার ভাগ্নে-টাগ্নেদের সরকার পতনের দুই-তিনদিন আগে নিরাপদে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উনার যারা নেতাকর্মী আছেন তাদের উচিত উনার পারসোনাল জবাবদিহি চাওয়া। আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ কর্মী থেকে থাকেন তারা প্রত্যেকে বিপদে পড়ছেন। তাদের উচিত শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা আমাদের কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন?’
‘শক্ত যখন হবো ভালোভাবে হবো’
বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কী উদ্যোগ আছে- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অসহনীয় জ্যাম সৃষ্টি করে আন্দোলন করলে, আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আন্দোলন করলে কিছুটা নর্মস থাকা দরকার। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না। কালকে আমি শুনেছি ট্রেনে ইট ছুড়ে সাধারণ মানুষকে আহত করা হয়েছে। এটা কী ধরনের আন্দোলন?’
রাষ্ট্র শক্ত হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দুয়েকজন যদি আহত হয়, গ্রেফতার হয়- এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি করবে না? আপনারা আবার দমন-নিপীড়নের মধ্যে যাচ্ছেন, এটা তো আমাদের মাথায় রাখতে হয়। শক্ত যখন হবো ভালোভাবে হবো।’
আরএমএম/কেএসআর/এমএস