সংসদে ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোটের তাগিদ
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুপারিশ করেছেন নির্বাচন নিয়ে খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা। এক্ষেত্রে তারা নারী আসন বাড়ানোর সুপারিশও করেছেন। এছাড়া একগুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সদস্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব সুপারিশ করেন।
আরএফইডির সভাপতি একরামুল হক সায়েম বলেন, গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধন করে যেকোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করে খবর সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি তুলে আনার প্রতি জোর দেন তিনি।
আরএফইডি সদস্য রিয়াদুল করিম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনের সংজ্ঞা সুস্পষ্টকরণ, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট ও যোগ্য লোককে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রবাসে দেড় কোটি ভোটার রয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব ও অন্যান্য কারণে ভোটের বাইরে থাকে ৫০ লাখের মতো ভোট। প্রায় দুই কোটি ভোটার বাইরে থাকেন। তাদেরও পোস্টাল ব্যালটের আওতায় আনা উচিত।
তিনি আরও বলেন, সংসদীয় আসন ৪০০ করা উচিত। ১০০ আসন হবে নারীদের জন্য। কেন না সংসদীয় ভোটারের ভারসাম্য থাকে না। সব প্রার্থীকে একমঞ্চে এনে প্রচারের বিষয়টা আইনের মধ্যে আনার প্রতি জোর দেন তিনি।
আরএফইডির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরসহ অন্য সাংবাদিকরাও নারী আসনে সরাসরি ভোট, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, কমিশনের অধীনেই এনআইডি কার্যক্রম রাখা, পেশিশক্তির প্রভাবরোধ, নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদা মন্ত্রীর ওপরে আনা, প্রশাসনের পরিবর্তে ইসি কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্বে আনাসহ নানা প্রস্তাব করেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, টাকা দিয়ে কর্মকর্তা কেনে, ভোট কেনে, এটা কীভাবে বন্ধ করা যায়, সেই পথ বের করতে হবে। কারণ এটা আর জনকল্যাণে নেই, এটা একটা ব্যবসা।
তিনি বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টি যদি ধরি, ওখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। তাহলে সংসদে ৪০০ আসন হবে। এখন সারাদেশে ওই ৪০০ আসনের ১০০টি আসনে শুধু নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, এক দলের সঙ্গে অন্য দল। অন্য ৩০০ আসনে নারী-পুরুষ সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এভাবে চারটি নির্বাচনে একশ ১০০ করে পরে সব আসনে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
বদিউল আলম বলেন, নাগরিক হিসেবে সবাই সজাগ থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে কাজ করেছে তা গুরুতর বিষয়। এগুলো বন্ধ করা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ২১টি সভা করেছি। এ সভাগুলোতে আমরা খোলামেলা আলোচনা করেছি। প্রত্যেকটি আইনকানুন, বিধিবিধান আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি। যার ভিত্তিতে সুপারিশ করতে পারবো। সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ই-মেইল পেয়েছি তিন শতাধিক, ফেসবুকে ৭০টি, ব্যক্তিগতভাবে হার্ডকপিতে মতামত পেয়েছি। মানুষের সাড়ায় উৎসাহিত হচ্ছি। যাদের মতামত সুস্পষ্ট আছে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো। সবার মতামত নিয়ে আমরা সুচিন্তিত একটা সুপারিশ করবো। যার ভিত্তিতে সরকার দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক আরও বলেন, নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট কেমন হবে, ভোটার তালিকা নারী ভোটার কমার কারণ, নির্বাচনী অপরাধরোধ, সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে অভিযোগ দূরীকরণ, নির্বাচনী ব্যয় ও পর্যবেক্ষণ, গণমাধ্যমের অবাধ তথ্য সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি, স্থানীয় নির্বাচন কী করে সুষ্ঠু করা হয়, গত তিন নির্বাচন কী ঘটেছিল এবং তা থেকে উত্তরণের উপায়, মাঠ প্রশাসনে ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে মতামত নেওয়া হবে।
কমিশন সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত নির্বাচনে কমিশন কত খরচ করলো, সেটার হিসাব বের করলাম, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বিরাট টাকা খরচ হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট ও মাঠ প্রশাসনের পেছনে। পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু প্রয়োগ হয় না। আমরা চাচ্ছি যারা বিদেশে আছেন কেবল তারা নন, যেন যারা দেশে আছেন- অক্ষম, নারী, কর্মস্থলের কারণে যারা এলাকার বাইরে আছেন, তাদের জন্য সুযোগটা রাখতে চাই।
‘যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের যেন সুযোগটা নিশ্চিত করা যায় সেটা ভাবা হচ্ছে। এতে একটা বিরাট অসুবিধা হচ্ছে, তাদের আইডি কার্ড নেই। এক্ষেত্রে পাসপোর্টকে আমলে নেওয়া কথা ভাবছি।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে আমাদের এখনো অবস্থান চূড়ান্ত করিনি। তবে মনে হয় দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হোক সেটা আমরা চাই না। আইনের পরিবর্তন না হলে এটা হবে না।
সভায় কমিশনের অন্য সদস্য এবং আরএফইডি সদস্য ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এমওএস/এমকেআর