কাকরাইল মার্কাজ নিজামউদ্দিন অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০৫ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল মার্কাজ সম্পূর্ণভাবে নিজামউদ্দিনের অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়াসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম এবং সাথীদের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাকরাইল মার্কাজের ইমাম মুফতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর থেকে কাকরাইলে তাবলিগের মূলধারার সাথীদের আমাল শুরু হবে। কিন্তু তাবলিগের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জোবায়েরপন্থিরা নিয়ম ভেঙে কাকরাইল মার্কাজ মূলধারার সাথীদের কাছে হস্তান্তর না করে দেশে একটি অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন মাদরাসার কোমলমতি ছাত্র ও সরলমনা তাবলিগের সাথীদের উসকানি দিয়ে জড়ো করছেন।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া জোবায়েরপন্থিদের গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আমাদের বিষয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছ। তারা বলেছেন কাকরাইল মার্কাজ একটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে, যার নাম বাংলাদেশ তাবলিগ মার্কাজ ট্রাস্ট। মাওলানা জোবায়ের স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- দিল্লি নিজামউদ্দিন মার্কাজের অনুমতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশে ইহাই একমাত্র তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এই ট্রাস্ট বিশ্ব মার্কাজ নিজামউদ্দিনের একটি শাখা। অবাক করার বিষয় ঘোষণা দিয়ে নিজামউদ্দিন বিশ্ব মার্কাজ থেকে যারা নিজেদের আলাদা গ্রুপের বলে পরিচয় দিচ্ছেন, তারা কিছু রাজনৈতিক উলামার প্রশ্রয় ও সমর্থনে সেই নিজামউদ্দিনের মার্কাজকেই দখলে নিতে চান।

মুফতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন বলেন, কাকরাইল মার্কাজ নিজামউদ্দিনের বাংলাদেশ শাখা। এটির ওপর সম্পূর্ণ অধিকার বিশ্ব মার্কাজ নিজামউদ্দিনের। দেশের আইন অনুযায়ী কাকরাইল মার্কাজ নিজামউদ্দিনের অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। তবুও যদি কেউ আমাদের সম্পদ এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে- সেটা হবে তাদের জন্য অনেক বড় ভুল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জোবায়েরপন্থিরা সারাবছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থি আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জোবায়েরপন্থিরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা করছি। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লি ও তাবলিগের সাথীরা।

সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয়পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার উল্লেখ করে মুফতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন বলেন, আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারাদেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।

এসময় তিনি সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো

১. দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহিংসতা এবং পারস্পরিক উচ্ছৃঙ্খল আচরণ পরিহার করে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২. কাকরাইল মার্কাজ সম্পূর্ণভাবে নিজামউদ্দিনের অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে।
৩. টঙ্গী ইজতেমার বৈষম্য দূর করে এই ইজতেমায় নিজামউদ্দিনের অনুসারীদের প্রথম পর্বে ইজতেমা করতে দিতে হবে।
৪. বিশ্ব ইজতেমার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাবলিগের বিশ্ব আমির হজরত মাওলানা সাদ সাহেবের ইজতেমায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দেশের সব মসজিদে তাবলিগের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা উভয়পক্ষের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
৬. উভয়পক্ষের জন্য স্থায়ীভাবে মার্কাজ পরিচালনার বন্দোবস্ত করতে হবে এবং
৭. তাবলিগের ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন সহিংসতাপূর্ণ প্রোগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।

এসআরএস/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।