বন্ধ হচ্ছে প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২৪

নতুন সব উন্নয়ন প্রকল্পে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগ পরিহার করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা চাকরির শেষ দিকে এসে রাজস্বভুক্ত হওয়ার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর রেকর্ডও রয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে এ পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ বন্ধ করছে সরকার।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত ২৫৩ জন জনবল বাদ দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের অর্গ্যানোগ্রামভুক্ত নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু এই প্রকল্প নয়, এই মন্ত্রণালয়ের নতুন কোনো প্রকল্পেই আউটসোর্সিং রাখা হবে না। তবে টেকনিক্যাল কিছু লোক রাখা হবে অস্থায়ীভিত্তিতে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. তোফাজ্জেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুনর্গঠিত প্রকল্পে আউটসোর্সিং সব জনবল বাদ দেওয়া হবে। এখন থেকে প্রকল্পের আওতায় জনবল নিয়োগ যথাসম্ভব পরিহার করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে মৎস্য অধিদপ্তরের অর্গ্যানোগ্রামভুক্ত নিজস্ব জনবল দিয়ে। প্রয়োজনে অর্গ্যানোগ্রামভুক্ত শূন্য পদগুলো পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

পুনর্গঠিত প্রকল্পে আউটসোর্সিং সব জনবল বাদ দেওয়া হবে। এখন থেকে প্রকল্পের আওতায় জনবল নিয়োগ যথাসম্ভব পরিহার করা হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের অর্গ্যানোগ্রামভুক্ত নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. তোফাজ্জেল হোসেন

তিনি বলেন, ‘অনেকে না বুঝে আউটসোর্সিং থেকে রাজস্বে যেতে চান, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। আউটসোর্সিংয়ে লোক নেওয়া ঝামেলা। এসব জনবল মাঝ বয়সে যাবে কোথায়। তাই আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকল্পে আর আউটসোর্সিং থাকবে না। দরকার হলে আমাদের শূন্যপদ পূরণ করবো।’

সরকারি সব দপ্তর-অধিদপ্তরে নিয়োজিত আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা (ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রথা)-২০১৮ বাতিল করে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বহাল রাখা ও বয়স শিথিল করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি। আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও শাহবাগে মিটিং-মিছিলও করেছেন।

এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের আউটসোর্সিং কর্মকর্তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা নিয়ে বিপাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাই নতুন প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের কোনো খাত রাখা হচ্ছে না। এমনকি কিছু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নোত্তর পর্যায়ে কোনো জনবল সুপারিশ করা হয় না। এছাড়া প্রকল্পের জনবলের কোনো পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর হবে না, শর্ত থাকে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নতুন সব প্রকল্পে আউটসোর্সিং জনবল পরিহার করতে হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে নিজস্ব জনবল দিয়ে। এখন থেকে প্রকল্পের আওতায় নতুন জনবল নিয়োগ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।

এমন নজির নেই। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে এমন কোনো নজির নেই। জনপ্রশাসনের আওতার বাইরে এটা করার সুযোগ নেই। আদালতের আদেশের মাধ্যমে এলে ভিন্ন কথা।-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ

পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের আওতায় আউটসোর্সিং জনবল পরিহার করতে হবে। না বুঝে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা রাজস্বে যেতে চান, যা সম্ভব নয়। একটি প্রকল্প নির্দিষ্ট মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়। অনন্তকালের জন্য আমরা আউটসোর্সিং থেকে রাজস্বে আনতে পারি না। তাহলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে সবাই আউটসোর্সিংয়ে প্রবেশ করবে। এতে যারা পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি পেয়ে রাজস্বে এসেছেন তাদের সঙ্গে আউটসোর্সিং জনবলের সঙ্গে বৈরিতা তৈরি হবে। এসব ঝামেলা এড়াতেই এখন থেকে নতুন প্রকল্পে আউটসোর্সিং জনবল দেওয়া হবে না।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, আউটসোর্সিং থেকে সরকারি রেভিনিউয়ে আসার নজির নেই। তবে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় এবং আদালতের সিদ্ধান্ত আসে তবে ভিন্ন কথা।

আউটসোর্সিং থেকে একজন কর্মী রেভিনিউয়ে আসতে পারবে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) মো. আব্দুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমন নজির নেই। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভিন্ন কথা। তবে এমন কোনো নজির নেই। জনপ্রশাসনের আওতার বাইরে এটা করার সুযোগ নেই। আদালতের আদেশের মাধ্যমে এলে ভিন্ন কথা।’

এমওএস/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।