নিজামীর রায়ের কপি কারাগারে


প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ০৯ মে ২০১৬

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সাজা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কেশব রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে চার কর্মকর্তা লাল ফাইলে মোড়ানো রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেন। কেশব রায় নিজে এই কথা জানান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গির কবীর রায়ের কপি গ্রহণ করেন। ট্রাইব্যুনালের ডেসপাচার সিরাজুল ইসলামও এ সময় কেশব রায়ের সঙ্গে ছিলেন। রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছে দিয়েই সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে চলে যান তারা।

কেশব রায় বলেন, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার এ রায়ের কপি রিসিভ (গ্রহণ) করেছেন।
সুপ্রিমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী বিকেল ৫টার কিছুপর এ রায়ের কপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন। একইসঙ্গে রায়টি পাঠানো হয় আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনলায় এবং ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু আগে ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা মেট্রো-চ ৫৮-৮১২১ নম্বরের একটি গাড়িতে রায়ের অনুলিপি নিয়ে কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ট্রাইব্যুনালের চার কর্মকর্তা।

nijami

সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দেবে কারা কর্তৃপক্ষকে। লিখিত চিঠি পাওয়ার পরই অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রায় কার্যকর করা হবে। রায় কার্যকরের আগে সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র নিজামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

দুপুরের দিকে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকদের সইয়ের পর বিকেলে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায় ওই রায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রায়ের এই অনুলিপি পৌঁছে দেয়া হলো কেন্দ্রীয় কারাগারে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে রায় প্রদানকারী চার বিচারপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২২ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এতে সই হওয়ার পর ওই আদেশ ও রায়ের কপি কারা কর্তৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

নিজামী হলেন পঞ্চম মানবতাবিরোধী অপরাধী ও তৃতীয় মন্ত্রী, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের পর্যায়ে এসেছে। এর আগে সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচতে মানবতাবিরোধী এ অপরাধীর সামনে এখন খোলা একটিই মাত্র পথ- তা হলো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। নিজামী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর, যদি ক্ষমা না পান তবে আইন অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে যেকোনো সময় ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ।  তবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, যারা ইসলামী আন্দোলন করেন তারা শহীদী তামান্না নিয়ে কাজ করে। ইসলামী আন্দোলনের সৈনিকরা ফাঁসির রশিতে ভয় পান না। নিজামী আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত করবেন না, তাই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এরআগে সাকা ও মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি তা প্রত্যাখান করেন।

সোমবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নিজামীর দণ্ড কার্যকর এখন সরকারের বিষয়। সরকার নির্ধারিত সময়ে কারা কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করবে।

২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে নিজামী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি ষষ্ঠ মামলা, যার চূড়ান্ত রায় হল। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো পাঁচটি মামলা আপিলে নিস্পত্তি হয়েছে। চূড়ান্ত পাঁচটি রায়ের পর চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আপিলের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও গত ৮ মার্চ জামায়াতের আরেক নেতা মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এখন এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এআর/জেইউ/এফএইচ/এনএফ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।