‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের বিকল্প নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কেবল আইন, নীতিমালা, জরিমানা, ভর্তুকি দিলেই হবে না বরং সরকারি-বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কাজ করছে তাদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দূরীকরণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

বুধবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ সেফ ফুড এলায়েন্স’ (বাসেফুএ) আয়োজিত বৈঠকে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। বাসেফুএ সভাপতি কাজী জিয়া শামসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবু।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে কৃষিতে ভর্তুকির প্রায় ৭০ শতাংশ খরচ হয় কীটনাশক আমদানিতে যা মাটি, পানি, বাতাসসহ গোটা পরিবেশ প্রকৃতিই মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। দিনদিন আমাদের খাদ্য তার ঐতিহ্যগত নিরাপদবলয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির প্রাকৃতিক ভান্ডার, দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর দেশে নিরাপদ খাদ্য এখন অনেকটাই হুমকির মুখে।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে তারা বলেন, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার, কলকারখানার বর্জ, রং ও কেমিক্যাল, অপ্রয়োজনীয় প্রিজারভেটিভ, কার্বাইড, ফরমালিন এসবের যথেচ্ছ ব্যবহার এখন প্রকাশ্য।

তারা আরও বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে খোলা ও নোংরা জায়গায় যত্রতত্র বিভিন্ন খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে এ ধরনের খাবার খেয়ে মানুষ নানারকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। পঙ্গু, বিকলাঙ্গ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ শিশুর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। এসব বিষয়ে আমাদের জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা বাড়াতে হবে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সকলকেই তৎপর হতে হবে।

আলোচকরা বলেন, বর্তমানের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা সংস্কারে এফটি আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এই সংস্কার কেবল নীতিগত পরিবর্তন নয় বরং চর্চারও পরিবর্তন আনতে হবে, পাশাপাশি নীতি প্রণয়নের দৃষ্টিভঙ্গি কী সেটা পরিষ্কার করা দরকার যেমন এটা রূপান্তর না পুনরুজ্জীবনমূলক।

তারা বলেন, সরকারকে নীতিনির্ধারণে এমন পরিবর্তন আনতে হবে যা জনস্বাস্থ্য এবং বাস্তুস্বাস্থ্যের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয়। কৃষি নীতিমালা ও শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ক্ষতিকর কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রথা বিকশিত হয়, যা পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যসম্মত।

বক্তারা বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে ভোক্তারা স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত হয়। নিশ্চয়ই সরকার জনবাস্তুস্বাস্থ্যবান্ধব কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার নীতি-চর্চার পুনরুদ্ধার কাজে হৃদয়গ্রাহী হবেন। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১৫/১৬টি আইন বিদ্যমান। তবু নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হয়নি। সেখানে গৃহিণীর যেমন সচেতনতা দরকার তেমনি একজন নীতিনির্ধারকের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

এসআরএস/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।