নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহকে নিয়োগের দাবি
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে স্বৈরাচারের দ্বারা নিগৃহীত মেরিন ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. শাখাওয়াত হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সদস্য মেহেরুল করিম, ক্যাপ্টেম মালেক, আতাউল্লাহ খান, আতিক উল্ল্যাহ এবং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
সংগঠনটির পাঁচ দফা দবিগুলো বর্ণনা করে বক্তারা বলেন, গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও ফ্যাসিবাদী প্রশাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশের নৌ-সেক্টর। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন মহাপরিচালক মেরিন ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহকে জামায়াতে ইসলামী ট্যাগ লাগিয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তর মহাপরিচালক ও অজ্ঞাত মহলের নির্দেশনায় বিভিন্নভাবে দমন-পীড়ন ও কূটকৌশলের প্রয়োগ করে নৌ-সেক্টর ও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
কাজেই আমাদের দাবি, বর্তমান নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দ্রুত প্রত্যাহার করে এই পদে স্বৈরাচারের দ্বারা নিগৃহীত মেরিন ক্যাপ্টেন শফিকুল্লাহকে নিয়োগ দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইএমও কর্তৃক প্রবর্তিত প্রায় ৫০-এর অধিক মেরিটাইম কনভেনশনের কোনো জ্ঞান ছাড়াই মেরিটাইম অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান বনে যাওয়া সব কাজের কাজী কমোডর মাকসুদ নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরে পদোন্নতি যোগ্য ও নিয়োগযোগ্য প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও সরকারকে উপযুক্ত কোনো প্রার্থী নেই বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। এছাড়া নৌ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার, চিফ ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভেয়ার, নটিক্যাল সার্ভেয়ার ও ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার পদ মন্ত্রণালয়ের অনীহা স্বত্ত্বেও মেরিনারদের বঞ্চিত করে ভিন্ন জায়গা থেকে অনুপযুক্ত লোক এনে পূরণ করার খেলায় মত্ত থাকেন।
এতে বাংলাদেশের মেরিটাইম প্রশাসন আইএমওর প্রবর্তিত আইএমএসএএস অভিট পাস করতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ বিশ্বে চলতে পারবে না। এতে মেরিনারদের বিশাল অংশ বেকার হয়ে পড়বে এবং দেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ সেক্টরের মৃত্যু ঘটবে। তাই নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দ্বারা অন্য সেক্টর থেকে অনুপোযুক্ত লোক এনে মেরিন প্রশাসনকে ধ্বংস করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখতে হবে এবং উপযুক্ত প্রার্থীদের পদোন্নতি ও নিয়োগ দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি বরিশালের কমান্ড্যান্ট নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন আতিক তার পত্রের মাধ্যমে নিজেদের স্বৈরাচারী মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। আইএমওর এসটিসিডব্লউ কনভেনশনের বিধান লঙ্ঘন করে তিনি সকল একাডেমির কমান্ড্যান্ট ও প্রফেশনাল প্রশিক্ষকের পদ নৌ-বাহিনী দ্বারা পূরণ করার দাবি জানিয়েছেন।
এতে করে বাংলাদেশ আইএমওর ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে যাবে। মেরিনাররা হারাবে চাকরি এবং সেই সাথে বাংলাদেশ হারাবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। তাই বরিশাল ও রংপুর মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্টকে অতিদ্রুত প্রত্যাবর্তন করে ওই পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগসহ সকল প্রশিক্ষকের পদে নিয়োগবিধি মোতাবেক অতি সত্ত্বর উপযুক্ত জনবল নিয়োগ প্রদান করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মেম্বার (হারবার) পদে পদোন্নতি যোগ্য উপযুক্ত প্রার্থীকে পদোন্নতি দেওয়ার মাধ্যমে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিনাশ করতে হবে।
বিএমএমওএর দাবি, বাংলাদেশের জাহাজ সেক্টরকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদাপূর্ণ করার লক্ষ্যে নৌ সেক্টরের সংস্কার, পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করা দক্ষ সিনিয়র মেরিনারদের সম্পৃক্ততা, অংশগ্রহণ ও পরামর্শ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশ গত ১৫ বছরে যতো অযাচীত ও অলাভজনক প্রকল্প হতে মুক্তি পাবে। সেই সাথে বর্তমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় উপদেষ্টাকে উল্লিখিত নৌ সেক্টরে সকল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন শ্রম অধিদপ্তর, সমুদ্রগামী দেশি ও বিদেশি জাহাজে এবং স্থলে কর্মরত সকল বাংলাদেশি মেরিন অফিসারদের নিয়ে গঠিত একমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন। এটি বাংলাদেশি মেরিন অফিসারদের একমাত্র পেশাগত সংগঠন যেখানে প্রায় ১২ হাজারের অধিক বাংলাদেশি মেরিন অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, যারা বিশ্ব বাণিজ্য পরিবহনে সর্বদাই সম্মুখ যোদ্ধা। বাংলাদেশি নাবিক তথা মেরিনাররা দেশের জন্য বয়ে আনছেন প্রায় ৬৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৫ বছর ধরে মেরিন সেক্টরে নানাবিধ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার পত্র প্রেরণ, সরাসরি সাক্ষাৎকার, সংবাদ সম্মেলন, পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো এখনও কার্যকরভাবে সমাধান হয়নি।
এএজেড/এমআরএম/জেআইএম