সেন্টমার্টিন নিয়ে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ কার্যকর নভেম্বরের আগেই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪১ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আগামী পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে অর্থাৎ নভেম্বরের আগেই কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সেন্টমার্টিন দ্বীপে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত করা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

আগের সরকারের সময় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হয়নি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের তিনটি পর্যটন স্পট- সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাকে আমরা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (একবার ব্যবহারযোগ্য) ব্যবহার মুক্ত করার কাজটা শুরু করবো। এটা একদিনে হবে না। কিন্তু আমরা কাজটা শুরু করবো।

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে মন্ত্রণালয় মোটামুটি প্রস্তুত আছে। এর আগের সময়টিতে সেন্টমার্টিন নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রবাল দ্বীপ আর বাংলাদেশে কোথাও নেই। এখানে বেশ কয়েকটি বিপন্ন বন্যপ্রাণী, পাখি, কাছিম এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। খুবই ছোট এই দ্বীপ। এটাকে আমরা কীভাবে রক্ষা করতে পারি সেজন্য সরকার কিছু কাজ আগেই করেছে।

‘পরিবেশ আইনে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। আবার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে মেরিন প্রটেক্টেড এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বীপটি দিনকে দিন নাজুক হচ্ছে।’

উপদেষ্টা জানান, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০১৯ সালের ১ মার্চ থেকে দিনের বেলা পর্যটন চালু থাকবে, রাতের বেলা থাকতে পারবেন না। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রবেশের ক্ষেত্রে নিবন্ধন এবং সংখ্যা সর্বোচ্চ এক হাজার ২৫০ জন হবে এবং জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। ২০২০ সালের ১৭ মার্চও রাত্রী যাপন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর লঞ্জ-জাহাজে মোট যাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ২৫০ জনের মধ্যে রাখতে হবে এবং একজন ব্যক্তি পাঁচজনের বেশি টিকিট কিনতে পারবে না। ধারাবাহিকভাবে সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলোর কোনোটি বাস্তবায়িত হয়নি।

‘এরপর পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালে একটি পর্যটন নির্দেশিকা দিয়েছে, যেন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিয়ে যাওয়া যাবে না। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের তালিকাও করতে বলা হয়। সামুদ্রিক কাছিমের ডিম কুকুর খেয়ে ফেলে। ৮৮২ জনের কথা বলা হয়। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে এবং নির্দেশিকাটি মানতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন চলছে প্রতিবেশ রক্ষা করতে আমরা কী কী কাজ করতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা হোটেল মালিক, ট্যুর অপারেটর, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাতে চাই। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার মুক্ত করার কাজ শুরু হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা বাঁচুক। এটা আমাদের জন্য বাঁচুক, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচুক। আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা সবাই দেখুক কিন্তু একই লোক পাঁচবার না যাক। আমি চাই সেন্টমার্টিন দ্বীপটা একটা কোলাহলমুক্ত দ্বীপ হোক।

গত মৌসুমে দুই লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ওইখানে কোনো হাসপাতাল নেই। আপনি যদি পর্যটন করতে চান তাহলে এগুলো ভাবতে হবে। আমরা চাই দ্বীপটা রক্ষা হোক এবং পর্যটনটাকেও আমরা একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা।

‘নিষেধ বাস্তবায়নে একটা টাইমফ্রেমে আমাদের আসতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাঁচলে আগামী প্রজন্মের জন্যও বাঁচবে। আর যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো সবাই মিলে গিয়ে ওটাকে শেষ করে দেই তাহলে পর্যটনটা থাকছে না। একটা সময় সীমার মধ্যে আমাদের আসতে হবে। সেটা সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

সামনে পর্যটন মৌসুম আসছে। সিদ্ধান্ত আগেই হবে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর বা ডিসেম্বর থেকে এর আগেই এসব বিষয়ে (বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ) সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন কর্মপন্থায় যাব সেটা হলো বিষয়, কোনটা নিলে আসলেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।

কেউ কেউ বলছে, সেন্ট মার্টিনে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি এসেছেন, কেউ বলছে কুকি চীনের কেউ কেউ এসেছে, কেউ কেউ বলেছে আমেরিকান নৌবহর এসেছে- প্রকৃত চিত্র কী? জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এমন কোনো তথ্য আসেনি। হোটেল-মোটেল মালিকের সাথে যখন কথা হয় ওনারা এ রকম কোনো কথা বলেনিনি। দেখি আজকে তারা কোনো কথা বলেন কিনা। আমাদের তো প্রিজামশন, অ্যাজামশনের শেষ নাই। প্রিজামশন, অ্যাজামশন যেন না হয় সেজন্য আপনাদের সাথে বসা।

আরএমএম/এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।