একনেকে উঠছে প্রকল্প

সহসাই স্বস্তি মিলছে না রংপুরবাসীর, ফের ব্যয়-মেয়াদ বাড়ছে ফোরলেনে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

একে একে ৮ বছর পেরিয়ে গেছে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ। অথচ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ১২ হাজার ৩২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ৬৫ শতাংশ এবং প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৭০ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের আগস্ট মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বার বার সময়-ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও এখনও স্বস্তি মিলছে না রংপুরবাসীর স্বপ্নের ফোরলেন প্রকল্পের।

নতুন করে ফের দুই বছর মেয়াদ বাড়ছে প্রকল্পের। তবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হবে। আরও এক বছর প্রকল্পের সার্ভিস কাজের জন্য হাতে রাখছে বলে জানায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

১৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু কাজের কারণে ৪০ কিলোমিটার ফোর লেন সম্পূর্ণ করতে বাকি সময় প্রয়োজন হবে। সর্বশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একনেক উইং সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৭ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করবেন। সভার কার্যতালিকায় প্রকল্পটি প্রথমেই স্থান পেয়েছে।

চার লেনের পাশাপাশি ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির দুই পাশে একটি করে সার্ভিস লেনও করা হচ্ছে। শুরুতে সড়কটির উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত। ২০১৯ সালে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর পর কভিড মহামারীকে কারণ দেখিয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয় সওজ। বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।

এরই মধেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সওজ। সাসেক সংযোগ প্রকল্প ২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের কাজ দারুণভাবে চলমান আছে। গোবিন্দগঞ্জের পলাশবাড়ির জমি অধিগ্রহণে কিছু সমস্যা ছিল সেই সমস্যা নেই। এই জমি পেয়েছি। এখানে দুটি ফ্লাইওভার হবে। ১৯০ কিলোমিটার ফোরলেনের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার সম্পর্ণ হয়েছে।

মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কারণে কিছুটা সময় লাগবে। আশা করছি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পূর্ণ হবে। তবে প্রকল্পের সার্ভিস কাজের জন্য আমরা হাতে আরও এক বছর রাখবো। প্রকল্পের গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ি এলাকায় কাজ বাকি। হাটিকুমরুল ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে কিছু কাজ বাকি এসব কাজ সম্পূর্ণ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বে।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পে সামান্য কিছু ব্যয় বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর গাছ লাগাবো এটা ধরা ছিল না। সরকার টাকা দিলে কাজ করবো না দিলে করবো না।’

সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, শুধু মেয়াদ নয় সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়েছে প্রকল্পের। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর পর প্রথম অনুমোদিত সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এর পরে বিশেষ সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ ১১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে থেকে আসবে।

সওজ জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তঃমন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণ, পকেট ভূমি অধিগ্রহণ, জমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত কারণে মেয়াদ বাড়ছে। ইউটিলিটি ব্যয় বৃদ্ধি ও পুনর্বাসন ব্যয় কমছে। প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি ও সে অনুযায়ী ঋণের অর্থায়ন সমন্বয়পূর্বক কমানো হচ্ছে। পরামর্শক সেবার ব্যয় কমানো, সম্পদ সংহের ব্যয় কমানো, ভ্যাট-আইটি সমন্বয়, প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যয় কমানো, রোড রিসার্চ-ট্রেনিং সেন্টার, টোল প্লাজা ও এক্সেল লোডসহ রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণ, হাটিকামরুল ইন্টারচেইঞ্জের ভায়াডাক্ট ও সার্ভিস লেইনে কংক্রিট দেওয়া কাজের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

পেভমেন্ট নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, নুতন খাত অন্তর্ভুক্তি: সড়কধার ও সড়ক ডিভাইরে বৃক্ষরোপণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লাইটিং, সেফটি ফার্নিচার, যাত্রি ছাউনি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করায় একটি প্যাকেজে সরকারি খাতের ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে। কোড সংশোধন, বেতন-ভাতা, পরিবেশ ছাড়পত্র ফির জন্য ব্যয় সময় বাড়ছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এর পরেই অনুমোদনের প্রশ্ন। চলমান প্রকল্পটি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি-তে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৩০ কোটি টাকা কমছে। প্রস্তাবনায় মাটির কাজের ব্যয় ৫৩ কোটি ৩৬ কোটি টাকা এবং প্রাইস এডজাস্টমেন্ট এবং কন্টিনজেন্সি ব্যয় ৮৭২ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে পেভমেন্ট নির্মাণ ব্যয় ১৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, স্ট্রাকচার নির্মাণ ব্যয় ৩৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বাড়ছে। মাটির কাজের প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে ডাটা, পোস্ট-ওয়ার্ক সার্ভে ডাটা ও ভলিয়্যুম ক্যালকুলেশনের এক্সেল শিট নিয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে।

পেভমেন্ট নির্মাণকাজের অনুমোদিত ডিজাইন, ভলিউম ও ভ্যারিয়েশন প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। সর্বশেষ অনুমোদিত সংশোধিত ডিপিপিতে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্সি সার্ভিস খাতে ৪ হাজার ৯৪৫ জনমাসের জন্য ৫২৮ কোটি ১২ লাখ কোটি টাকার সংস্থান ছিল।

প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে খাতের ব্যয় ৪৭৯ কোটি ৫৪ লাখ অর্থাৎ ৪৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হলেও ২৯২৯ জনমাস বৃদ্ধি পেয়েছে। জনমাস বৃদ্ধি পেলেও পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় হ্রাসের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ মোট ৩২৬ হেক্টর অপরিবর্তিতে রেখে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণ, পকেট ভূমি অধিগ্রহণ, জমির শ্রেণি পরিবর্তনজনিত কারণে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পূর্বানুমোদনকৃত ৩৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকাসহ মোট ৮১৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৯০ দশমিক ৪০ কি.মি পেভমেন্ট নির্মাণের জন্য ১৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ প্রাক্কলনের ভিত্তি নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পে ১৪ হাজার ৯৬৬ মিটার ফাউন্ডেশনসহ স্ট্রাকচার খাতে ৩৬৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনসহ স্ট্রাকচার খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। রোড অপারেশন ইউনিট খাতে ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ২১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। থোক বরাদ্দ না রেখে রোড অপারেশন ইউনিটে কি কি কাজ করা হবে এর বিস্তারিত বিবরণ ও প্রাক্কলন নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

নতুন খাত হিসেবে রোড ফার্নিচার, স্ট্রেট লাইটিং, বৃক্ষরোপণ, ফ্যান্সিং প্রভৃতি উল্লেখ করে জিওবি খাতে ৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। থোক বরাদ্দ না রেখে প্রতিটি আইটেমের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

ইউটিলিটি শিফটিং খাতে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ১৮৪কোটি ৮৭ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ থেকে সংগ্রহ করে এ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি খাতে ৫ কোটি টাকা এবং প্রাইস কনটিনজেন্সি খাতে ১৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হলেও মোট ব্যয়ের শতকরা হার উল্লেখ করা হয়নি।

বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প সমাপ্ত করতে অতিরিক্ত ২ বছর সময়ের প্রয়োজন। এ বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে ইআরডি-উন্নয়ন সহযোগীর সম্মতি রয়েছে কি না সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।

এমওএস/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।