পাহাড়িদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি
দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটি শহরে পাহাড়িদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে তদন্তের দাবি জানিয়েছে নিহতের স্বজন ও ভুক্তভোগীরা।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংঘাতে আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী কুকুমনি চাকমা। তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলা এই বর্বরোচিত হামলায় চার জন নিহত ও শতাধিক আহত হন, যারা সবাই পাহাড়ি। গুরুতর আহত দু'জন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন। দীঘিনালায় ১০৫টি দোকান ও রাঙামাটিতে ছোট-বড় অন্তত ১০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলাকারী সেটলার বাঙালিরা রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অফিসেও হামলা চালায় এবং সেখানে গ্যারেজে রাখা ৯টি গাড়ি ও একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া সেটলাররা বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মৈত্রী বিহারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হামলা শেষ হওয়ার পরই কেবল প্রশাসন রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সরকার ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিট গঠন করলেও হামলা, খুন ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। অন্যদিকে পাহাড়িদের মধ্যে এখনও ভয় ও আতঙ্ক কাটেনি। হামলার ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা লাইভ করেছিলেন তাদের পুলিশ গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করছে বলে জানা গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, মাইকে ঘোষণা দিয়ে পাহাড়িদের ওপর হামলা করতে বাঙালিদের উসকানি দেওয়া হয়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বোয়ালখালি, জামতলি ও গরু বাজারের দিক থেকে শত শত সেটলার বাঙালি ধেয়ে আসে এবং পাহাড়িদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে সেটলারদের পক্ষ নেয় এবং ফাঁকা গুলি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাহাড়িদের তাড়িয়ে দেয়। এরপর সেটলাররা বটতলা ও লারমা স্কোয়ারে পাহাড়িদের দোকানে ব্যাপক লুটপাট চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, দীঘিনালা সদরে পাহাড়িদের ওপর হামলা ও তাদের দোকানপাটে আগুন দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে হাজার হাজার পাহাড়ি দীঘিনালা বাবুছড়া সড়কে নেমে পড়ে। সন্ধ্যায় মাইনি ব্রিজ এলাকায় পাহাড়িরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকরলে ১০-১২ জনের সেনাবাহিনীর একটি দল ফাঁকা গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় ধনরঞ্জন চাকমা সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। আর্মিরা তাকে ভীষণভাবে মারধর করে, বন্দুকের বাট দিয়েও আঘাত করা হয় এবং বেয়নেট দিয়ে পুরো ঠোঁট কেটে দেয়। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি জানান তারা। দাবিগুলো হলো,
১. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও স্বনির্ভর এলাকায় এবং রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হামলার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়পূর্বক উক্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও নির্দেশনা মোতাবেক নিহত-আহতদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. অতিদ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সুচিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. হাসিনা সরকারের পদায়িত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে হবে। প্রচলিত ও সেনা আইনে বিচার করতে হবে।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সেনাশাসন ও সেটলারদের প্রত্যাহার করতে হবে।
এনএস/এসআইটি/জিকেএস