সিজিআই ইভেন্ট

স্টেজে ওঠা ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ অনুপ্রবেশকারী: মাহফুজ আলম

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
স্টেজে তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ লিডারস স্টেজ’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানের মঞ্চে তিনি তার দীর্ঘদিনের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলার ফাঁকে স্টেজে ওঠা তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দেন।

এই তিনজনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা তার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও সরকার পতনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। স্টেজে থাকা অন্য দুজন হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি এবং হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিন রাজিন। মাহফুজ ও তিথির নাম ড. ইউনূসের সফরসঙ্গীর তালিকায় থাকলেও জাহিনের নাম ছিল না। 

এর মধ্যে জাহিন রাজিনের আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে। তার স্টেজে ওঠার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিস্তারিত জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। তবে মাহফুজ আলম তার নাম উল্লেখ করেননি। 

স্টেজে ওঠা ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ অনুপ্রবেশকারী: মাহফুজ আলম

মাহফুজ আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিজিআই ইভেন্ট এবং অনুপ্রবেশকারী লোক সম্পর্কে একটি স্পষ্টতা! সিজিআই ইভেন্টের লোকটা একজন অনুপ্রবেশকারী এবং অসাধু লোক ছিলেন। নিজ থেকে তিনি সিজিআই ইভেন্টে যোগ দিয়েছেন। তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের এবং সেখানকার প্রতিনিধি দলের সদস্যদের জানা ছিল না। তিনি প্রতিনিধি দলের কারও সঙ্গে আগে যোগাযোগও করেননি।’

মাহফুজ আরও লিখেছেন, ‘স্যার (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) যখন আমাদের স্টেজে ডাকেন তখন তিনি তাড়াহুড়া করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে স্টেজের দিকে দৌড়ে যান। আমি ওই লোকটাকে স্টেজে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারলাম না, যদিও আমি সন্দিহান ছিলাম। বিশ্বনেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে আমি আবারও অসহায় হলাম।’

আরও পড়ুন

‘মনে হচ্ছে, এটা ছিল ফ্যাসিস্টদের পূর্বপরিকল্পিত নাশকতার কাজ। আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতা, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা আগামী দিনে গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকবো।’

স্টেজে ওঠা ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ অনুপ্রবেশকারী: মাহফুজ আলম

হুট করে স্টেজে ওঠা তৃতীয় এই ব্যক্তি সম্পর্কে প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ী রবিনটেক্স গ্রুপের মালিক, আবুল খায়ের মোঃ সাখাওয়াতের ছেলে জাহিন রোহান রাজিনকে, গতকাল (মঙ্গলবার) ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব দরবারে সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বেশ অবাকই হয়েছিলাম। হাজারের বেশি প্রাণের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঝেটিয়ে বিদায় করলো, সেই স্বৈরাচার সমর্থক এবং ওই দলের ডোনার ব্যক্তির সন্তানকে সমন্বয়ক হিসেবে স্টেজে তোলার আসল মজেজাটা কি?'

‘এদিকে জাহিন রোহানের বড়-ভাই রবিন রাজন সাখাওয়াত যমুনা ব্যাংকের পরিচালক আওয়ামী সরকারের সময় থেকেই। আরো শোনা যাচ্ছে পলাতক সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পুত্র সাইদুল ইসলাম — যে কিনা এখনো যমুনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন জাহিনের বড় ভাই রবিন রাজন সাখাওয়াত।

আচ্ছা, কুখ্যাত আওয়ামী মন্ত্রী তাজুল ইসলাম কোথায় লুকিয়ে আছেন? কেউ কি তাকে রক্ষা করছে?’

স্টেজে ওঠা ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ অনুপ্রবেশকারী: মাহফুজ আলম
সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গে জাহিন রোহান রাজিন/ছবি: সংগৃহীত

‘তলে তলে এ ধরনের আঁতাত, বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নিবে না’ উল্লেখ করে জুলকারনাইন সামি লেখেন, ‘ড.ইউনূস সাহেব হাজার শহীদের রক্তের সাথে তামাশা করার জন্যে আপনাকে সরকার প্রধান করা হয় নাই। আপনার আশেপাশে এত লোক, আগামীতে যথাযথ ভেটিং করায়ে লোকজনকে পরিচয় করাবেন।’

শেষে বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে জুলকারনাইন সামি লেখেন, ‘চাইলাম আর লাফ দিয়ে ভিভিআইপির স্টেজে উঠে গেলাম তাও যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্লিনটন খোদ উপস্থিত? সেটা অসম্ভবই বটে। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস আগে থেকেই জানার কথা কারা উন্মুক্ত স্টেইজে সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে। শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার দরকার নাই।’

এ বিষয়ে জাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা। তিনি বলেছেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম সিজিআই ফেলো হিসেবে। ড. ইউনূস ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে যখন ডাকলেন, তখন আমি দর্শকসারিতে ছিলাম। পাশে ছিলেন দুই বিদেশি ভদ্রলোক। তারা আমাকে বললেন, তুমি বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও। তাই আমি কিছু না ভেবেই স্টেজে উঠে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো আমি। আমার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের কাজ এগিয়ে নিতে আমি ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। নিউইয়র্কে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি আসবেন শুনে খুশি হয়েছিলাম এ কারণে যে, তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে।’

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের সঙ্গে ছবি ছড়ানো প্রসঙ্গে জানতে জাহিন বলেন, ‘২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে একটা কাজ করে হাইড্রোকো প্লাস। সে কাজের জন্যই মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল। সেসময় তোলা ছবিটি। এটি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলো, তা জানি না। আন্দোলনের সময় দেশেই ছিলাম। এ আন্দোলন সমর্থন না করার প্রশ্নই আসে না।’

ইএ/এমএমএআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।