আন্তঃসীমান্ত ৫৪ নদীর ৩৬টিতে ৫৪টি বাঁধ দিয়েছে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক আইন থাকলেও ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই এসব আইনের তোয়াক্কা করছে না। এরইমধ্যে তারা (ভারত) আন্তঃসীমান্ত স্বীকৃত ৫৪ নদীর ৩৬টির ওপরই মোট ৫৪টি বাঁধ (ব্যারেজ) এবং ড্যাম তৈরি করেছে। ফলে এসব বাঁধ ভাটি অঞ্চলে পানির স্বাভাবিক ও যথাযথ প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গ্রিন রোডের পানি ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার’ বিষয়ক বিশেষ সেমিনার এমন তথ্য জানানো হয়েছে। ২৯টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ এবং বিশ্ব নদী দিবস ২০২৪ উদযাপন পরিষদ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার উজানে ভারত, নেপাল এবং চীনের অংশে একতরফা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ায় এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ড্যাম তৈরি করে পানি সরিয়ে নেওয়ার কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি প্রাপ্যতা ও নাব্যতা শুষ্ক মৌসূমে ব্যাপকভাবে কমেছে। শুধু গঙ্গা নদীর অববাহিকাজুড়ে ভারতের ১৮০টির বেশি বাঁধ দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এলাকায় বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদীতে ভারতের প্রায় ৩০টি বাঁধ, ডাম ও পানির সংরক্ষণাগার রয়েছে। সিকিমের পর্বতশৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন, ভারত ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লাইফ লাইন বলে খ্যাত তিস্তা নদীর ওপর ১০টির বেশি বাঁধ-ব্যারাজ ও জলাধার নির্মাণ করেছে ভারত, প্রক্রিয়াধীন আছে আরও ৫টি বাঁধ। তবে বাংলাদেশের জন্য অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদীতে নির্মিত ভারতের বিশেষ ৩টি বাঁধ।

এতে আরও বলা হয়েছে, নদী রক্ষার আকাঙক্ষা বাংলাদেশের জন্য কোনো ছোট বিষয় নয়। নদী রক্ষা আমাদের বেঁচে থাকার ও ভালো থাকার প্রধান চাবিকাঠি।

এসময় আন্তঃসীমান্ত নদী রক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ ও দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশ গুলো হচ্ছে-

১. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে পুনরায় গঠন করে দেশের অভ্যন্তরে ও প্রতিবেশী দেশের সব আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা উদ্যোগ গ্রহণ করা।

২. বিদ্যমান গঙ্গা চুক্তিটি সংশোধন করে নবায়নের বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা। সেইসাথে নতুন চুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ রাখা। বাংলাদেশ অংশে প্রবাহিত পানির পরিমাণ প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩. তিস্তা চুক্তি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গঙ্গা-যমুনা-মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে পানি কূটনীতিকে বাংলাদেশের সব কূটনীতির কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে উদ্যোগ নেওয়া।

৪. অবশিষ্ট আন্তঃসীমান্ত নদী খুঁজে বের করে স্বীকৃতির দাবি জানানো। আন্তর্জাতিক আদালতে সব আন্তঃসীমান্ত নদীর অধিকার আদায়ের জোরালো দাবি তোলা। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত করাসহ জাতিসংঘের নদী কনভেশন (১৯৯৭) সনদে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর করা ও যৌথ নদী কমিশনকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দিয়ে সক্রিয় করা।

একইসাথে আন্তঃসীমান্ত নদী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আন্তঃসীমান্ত নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের শিল্প দূষণ বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, পানি-পলি ব্যবস্থাপনা, আন্তঃসীমান্ত বাঁধের প্রতিও গুরুত্বারোপ করতেও সুপারিশ করা হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা।

সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এবং পরিবেশবাদী সংগঠন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস।

আরএএস/এসএনআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।