কেমন ছিলেন নিহত সেনা কর্মকর্তা, জানালেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন মো. তানজিম সারোয়ার নির্জন(২৩)। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শুভাকাঙ্ক্ষাীরা। তার নিহত হওয়ার খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন অনেকেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে নিহত ওই সেনা কর্মকর্তার ছবি শেয়ার করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

jagonews24

তিনি লেখেন, ‘সকালবেলায় উঠেই যে খবরটা পেলাম, তা শুনে অনেকক্ষণ বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন (বিএ-১১৪৫৩) নিহত হয়েছে।

রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে একটা সোর্সের বরাত দিয়ে অস্ত্রসহ স' ন্ত্রা' সীর খোঁজ পেয়ে আর্মির একটা টিম অভিযানে গিয়েছিলো কক্সবাজারের চকরিয়াতে।অস্ত্রধারীদের ঘাঁটি কর্ডন করে রেখেছিলো আর্মির টিম, আর্মির ওপর টার্গেট করে গুলি ছুঁড়তে থাকে মিসক্রিয়েন্টরা। তানজিমের শরীরে গুলি লাগে। আবার স' ন্ত্রা' সী রা এরপর এলোপাথারি ছুরিকাঘাতও করে তানজিমের ওপর। চোখে এবং কাঁধে ব্যাপকভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুলি এবং ছুরিকাঘাত উভয়ই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে জানা যাচ্ছে সর্বশেষ খবরে। তবে আর্মির পক্ষ এই ব্যাপারে চূড়ান্ত বিবৃতি দিলে হয়তো পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে আরও ডিটেইলস জানা যাবে। ঘটনা ঘটার পর ইমিডিয়েটলি তাকে ফিল্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়, অবস্থা বেগতিক দেখে সিএমএইচে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু নেওয়ার আগেই মারা যায় তানজিম। কলেজে আমার তিনব্যাচ জুনিয়র ছিলো তানজিম, হাউজমেট ছিলো। পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৩৬তম ব্যাচের ক্যাডেট ছিলো সে। হাউজের জন্য বহু কাজ ছেলেটাকে দিয়ে করিয়েছি। যখন যা কমান্ড করতাম, তড়িঘড়ি করে কাজ সেরে ফেলতো। কত কত স্মৃতি যে আছে ছেলেটার সাথে, তা বলে শেষ করা যাবে না। কলেজে যেই তিনবছর পেয়েছি, দৈহিক গড়নে ছেলেটা ছিলো খুবই পিচ্চি। আমি ওকে ডাকতাম 'লিটল তানজিম' নামে। ওদের ব্যাচের যে কয়েকজন জুনিয়রের সাথে কলেজ থেকে বের হওয়ার পরও খুব ভালো যোগাযোগ ছিলো, তার ভেতর লিটল ছিলো সবচেয়ে ক্লোজ। মাঝেমাঝেই ফোন দিয়ে, মেসেজ দিয়ে কথাবার্তা বলতো। এমনকি এবারের আন্দোলন চলার সময়ও ছেলেটা একদম প্রথম থেকেই যোগাযোগ রাখতো, আমার কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে খুব কনসার্নড ছিলো ছেলেটা, ইউনিফর্ম পরে মুক্তিকামী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাতে ওর কখনোই দাঁড়াতে না হয়, এটা ওর ভাবনার ভেতর সবসময় ছিলো। স্বৈরাচারের অবৈধ নির্দেশ পালন না করে জনগণের পক্ষেই যে ম্যোরাল সাপোর্ট বজায় রাখতে হবে ওদের, এই ব্যাপারটা ছেলেটা খুব ভেতর থেকে অনুধাবন করতো। সেদিনও ফোনে কত কথা বললো। ওর পরিচিত এক ফ্যামিলি পারসনের ইস্যু নিয়ে। হঠাৎ করেই ওর আইডিতে ঢুকে দেখি আমাকে বার্থডে উইশও করে রেখেছিলো, ব্যস্ততার কারণে সেই মেসেজটা পর্যন্ত দেখতে পারিনাই। ওর মেসেজটার উত্তরটা আর কোনদিন দেওয়া হবে না! কোনদিনই না! আমার এই সোনার টুকরা ছোটভাইটা আজ চিরতরে হারিয়ে গেলো। হে আল্লাহ, তুমি আমার লিটল-কে শহীদ হিসাবে কবুল করে নিও। হে আল্লাহ, তুমি আমার লিটল-কে জান্নাত নসীব কোরো।’

কেমন ছিলেন নিহত সেনা কর্মকর্তা, জানালেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ

তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এত এত স্মৃতির পসরা রেখে এভাবেই তোকে চলে যেতে হলো চিরতরে! অস্ত্রধারী স' ন্ত্রা' সী রা তোকে এভাবে চিরতরে শেষ করে দিলো! সেদিনও কত কথা হলো, ওইটাই যে শেষ কথা হবে, সেটা কে জানতো! তানজিম, তুই যে আর নাই, সেটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমার স্মৃতিতে সারাটাজীবন তুই বেঁচে থাকবি ওই লিটল তানজিম হিসাবেই।’

সবশেষ স্ট্যাটাসে তিনি নিহত এই সেনা কর্মকর্তার জানাজা নিয়েও কথা বলেন।

তিনি লেখেন ‘নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিম এর জানাজা ঢাকায় কেন করা হচ্ছে না? রামু থেকে কেন তাকে সরাসরি নিজ জেলা টাঙ্গাইলে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান চলছে? ঢাকায় তার একটা কেন্দ্রীয় জানাজা হওয়া উচিৎ ছিলো, অবশ্যই উচিৎ! ঢাকায় তার জানাজা হলে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারতো। আমাদের সেনাবাহিনীর জীবন এত তুচ্ছ না। সবাইমিলে তাদের প্রটেকশনের জন্য একতাবদ্ধ হওয়ার দরকার আছে। ঢাকায় তানজিমের জানাজা হলে, সেটা ফোকাসে আসতে পারতো বেশি। আমার দাবি থাকবে সরাসরি টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দিয়ে দাফন করার আগে, ঢাকায় তার একটা জানাজার আয়োজন করা দরকার সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে।’

কেমন ছিলেন নিহত সেনা কর্মকর্তা, জানালেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানের ছাগলকাণ্ড সামনে এনেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। এর আগে, ‘রাফসান দ্য ছোট ভাই’ নামক একজন ইউটিউবারের পরিবারের ঋণখেলাপির বিষয় জনসম্মুখে এনে আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী। সেই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন পরিচিত মুখ তিনি।

এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।