বিচার চেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাদী, প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামিরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩২ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বামীকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করে বেশ চাপে ছিলেন ভুক্তভোগী এক নারী। এর মধ্যে স্বামী হত্যা মামলার আসামি এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা আবারো ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন। বিচার পাওয়ার আশায় আবারো মামলা দায়ের করেন তিনি।

ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নতুন বাংলাদেশে এবার অন্তত বিচার পাবেন, আসামিরা পাবেন শাস্তি। তবে, সেটি এখনো হয়নি, আসামিরা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এমনকি আসামিদের প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। আসামিদের প্রাণনাশের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন খোদ ভুক্তভোগী নারী।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, আসামিরা প্রভাবশালী বিশেষ করে এক নম্বর আসামি শ্যামল হাসান রুবেল ছিলেন গ্রেফতার হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সলিমুল্লা সলুর প্রধান সহযোগী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় সুজন নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন সলু। কিন্তু থামেনি রুবেলের বেপরোয়া জীবন যাপন। আসামি রুবেলের কারণেই পলাতক জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগী নারী।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টর দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পাসপোর্ট করার জন্য যান ভুক্তভোগী। এসময় স্বামী মো. রানা হত্যা মামলার আসামি সবুজ, শাহ আলমের সঙ্গে আসে নতুন দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি শ্যামল হাসান রুবেল, সাজ্জাদ, মল্লিক পারভেজ, পূর্বপরিচিত পলাশ, মো. হীরা, চাঁন মিয়াসহ বেশ কয়েকজন। যাদের সঙ্গে আগে থেকেই তার স্বামী হত্যা মামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল।

কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনের রাস্তায় একা পেয়ে কথা আছে বলে ভুক্তভোগী নারীর গতিরোধ করে। একপর্যায় সবুজ ও শাহ আলমদের বিরুদ্ধে করা পিটিশন মামলা নং-৬২৪ তুলে নিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় জোর করে অপহরণের পর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে ঝিলমিল প্রজেক্টের ভেতর পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় ওই নারীকে। সেখানে তারা সবাই ধর্ষণচেষ্টা করে নারীকে। শ্যামল হাসান রুবেল হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যার চেষ্টাও করে। গলা টার্গেট করে কোপ দিলে সরে যাওয়ায় বাম হাত কেটে যায় ওই নারীর। ৮ হতে ১০ ইঞ্চির মতো কেটে যায়, ধস্তাধস্তি ও ব্যাপক মারধরের শিকার নারীকে জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়। তবে ভুক্তভোগীর চিৎকারে পথচারী ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সটকে পড়ে আসামিরা।

পরবর্তীতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে চারদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন ওই নারী। মামলা নং ১৯/৫৮৩।

ভুক্তভোগী নারী জানান, তার স্বামী ভাঙারির ব্যবসা করতেন। একবার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানা হেফাজতে নিয়ে স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। পরে হত্যার শিকার হন। ওই ঘটনায় একটা মামলা করছিলাম। স্বামী হারাইয়া আমিই হুমকিতে ছিলাম।

ওই মামলাটাই তুলে নিতে বার বার চাপ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি বিদেশ যাবার চেষ্টা করতেছিলাম। বাঁচতে তো হবে। সেজন্য গত ৪ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলাম কেরানীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসে। সেখান থেকে আমাকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়। সেদিন কোনোরকমে জখম নিয়ে বেঁচে এসেছি।

ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, আমার এক মেয়ে দুই ছেলে। স্বামী হারিয়ে বিপাকে আছি। এখন তো স্থির হতে পারছি না, চাকরিও করতে পারতেছি না। স্বামী হত্যা মামলা তুলে নেবার চাপ তো আছেই। ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় আমার দায়ের করা মামলার এক নম্বর আসামিসহ অন্যদের প্রাণনাশের হুমকির কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ডিবি পুলিশের হাতে মামলাটির তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ এখন মামলার অগ্রগতি ও আসামি গ্রেফতার সংক্রান্তে বলতে পারবে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা জেলার ডিবির দক্ষিণের ইন্সপেক্টর সাইদুল ইসলাম জানান, মাত্র মামলাটি হাতে পেয়েছি আমরা। মামলা হলেই তো আর আসামি ধরা যায় না। তদন্ত করার সময় দিতে হবে। মামলার ডকেট পাওয়া মাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছি। সত্যতার ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে।

টিটি/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।