সবচেয়ে ছোট বহর নিয়ে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ড. ইউনূস
স্মরণকালের সবচেয়ে ছোট প্রতিনিধিদল নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার ৫৭ জনের বহর নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সময় ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবেন। এর আগে ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রেসসহ কয়েকজন এরই মধ্যে নিউইয়র্ক পৌঁছে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবার বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সদস্যের প্রতিনিধিদল চার্টার্ড বিমানে নিউইয়র্ক সফর করেননি তিনি। যার যেই সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব, সে অনুযায়ী যতটা সম্ভব সীমিত আকারে প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তিনদিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে ৭৩তম অধিবেশনে ৩৪৪ জন, ৭৪তম অধিবেশনে ৩৩৫ জনের প্রতিনিধিদল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান শেখ হাসিনা। এরপর করোনার জন্য ৭৫তম অধিবেশন হয়েছে ভার্চুয়ালি। কোভিডের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৬তম অধিবেশনে ১০৮ জন, ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন এবং কোভিড পরবর্তী যখন ব্যয় সংকোচন বলা হচ্ছিল তখনও ৭৮তম অধিবেশনে ১৪৬ জনের বহর নিয়ে গেছেন হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট জানান, অতীতে বহরগুলো সরকারি খরচে অধিকাংশ যাত্রা করলেও আগ্রহী কোন কোন অংশীজন নিজ খরচে অংশ নিতেন। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, রজনৈতিক ব্যক্তি এ সুযোগ নিতেন। তবে সেটির সংখ্যা খুবই কম। এত বড় বহরের ৯০ শতাংশ খরচই রাষ্ট্রকে বহন করতে হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, আগের সরকার কেন বড় ডেলিগেশন নিয়ে যেত সেটি আমি জাস্টিফাই করতে পারব না, আমি তখন আপনাদের সাথেই সাধারণ মানুষ ছিলাম। সুতরাং আমি জানি না। তবে বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবশ্যই ব্যয় সংকোচ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো খরচ করা যাবে না।
তিনি বলেন, এবার নিরাপত্তা এবং প্রেসসহ সবমিলিয়ে আপনারা জানেন কিছু বিষয়ে আমরা সংকোচন করতে পারি না, কারণ নিরাপত্তা তো সবার ওপরে। সবমিলিয়ে এবার ৫৭ জন যাচ্ছেন। তার মধ্যে বড় অংশ নিরাপত্তা এবং প্রেস। আমি এতটুকু বলতে পারি একেবারে নিতান্ত যাদের প্রয়োজন তারাই যাবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। তাই বহর নয় বরং দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। অতীতে গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিনিধি নেওয়ার চেয়ে রাজনৈতিক বিষয়কে মাথায় রেখেই অনেকে প্রতিনিধিদলে জায়গা পেতেন। সেখান থেকে অনেকটাই ভিন্ন এই সরকার।
স্বাভাবিক সময় পররাষ্ট্র সচিবরাও বহরে যুক্ত থাকেন। তবে এবারের সফরে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনও যাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জাগো নিউজকে বলেন, এ যাত্রায় আমি যাচ্ছি না। পরবর্তীতে যাবো।
এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হলো- ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার অগ্রগতির জন্য একযোগে কাজ করা।’ বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকট, বহুপাক্ষিকতা এবং আলোচনার পথ উপেক্ষা করার ফলে সৃষ্ট সংকট থেকে সংঘাত, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পাশাপাশি উদ্ভূত নানারকম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপের অনুপস্থিতি – ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত অর্থবহ।
- আরও পড়ুন
- নিউইয়র্কের পথে প্রধান উপদেষ্টা
- নিউইয়র্কে ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে
- চার্টার্ড নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন ড. ইউনূস
- জাতিসংঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে গত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসবে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি দ্য নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসক প্রভৃতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
তবে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হতে পারে। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
আইএইচআর/এমআরএম/জিকেএস