পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জিটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানান তারা।
জিটিসিএল অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, জিটিসিএল কর্মচারী ইউনিয়ন, জিটিসিএলের সর্বস্তরের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী মানবৃবন্ধনে ও বিক্ষোভে অংশ নেন।
এসময় পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা তুলে ধরেন তারা। আন্দোলনকারীরা, ‘মিথ্যাবাদী-ফ্যাসিস্টের দোসর ও স্বেচ্ছাচারী চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই’, ‘পেট্রোসেক্টরে মেধা রক্ষায় স্বতন্ত্র পে-স্কেল চাই’, ‘জিটিসিএল-এর পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন চাই’, ‘অযৌক্তিক ও অবৈধ সিস্টেম লস বাতিল করো, করতে হবে’, ‘উচ্চ চাপের সঞ্চালন লাইনে সিস্টেম লসের সুযোগ নাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ছাড়াও তাদের অন্যতম প্রধান দাবি, জিটিসিএল কর্তৃক পরিচালিত উচ্চ চাপ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনে পেট্রোবাংলা থেকে অযৌক্তিক এবং অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া সিস্টেম লস শূন্য ঘোষণা করা।
মানববন্ধনে আইসিটি বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক রাবেয়া কাদির বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরেই আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। কারণ আমাদের সবকিছু অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আমরা মেনে নিচ্ছি। এখন সুযোগ এসেছে এই বৈষম্য বন্ধ করার।’
তিনি বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পেট্রোবাংলা কীভাবে আমাদের পদোন্নতিগুলো নিয়ে নিয়েছে, কীভাবে তাদের লোক ঢুকিয়ে আমাদের পদোন্নোতিগুলো খেয়ে দিয়েছে। পেট্রোবাংলা আমাদের প্রশিক্ষণগুলো খেয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা ছিল না। ১৯৯৪ সালে কোম্পানির একটি অ্যাক্ট আছে। সেটার মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠিত। পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান আমরা। উচিত ছিল আমাদের আমাদের মতো চলতে দেওয়া। কিন্তু সেটা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিস্টেম লসের কথা বলে আমাদের এত সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পুরো অযৌক্তিক একটা জিনিস আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটার জন্যই আমাদের আজকের আন্দোলন। আমরা চাই, আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। আমাদের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ও স্বতন্ত্র পে-স্কেল দিতে হবে।’
মানবন্ধনে ট্রান্সমিশন ডিপার্টমেন্ট ঢাকার উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সামছুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আজ বিস্ফোরিত হয়েছে। সারাদেশের সব মহলে আজ আমাদের দাবি এক দফায় পরিণত হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে আমরা অনুরোধ করবো সম্মান নিয়ে অনুগ্রহ করে আপনি চলে যান। আপনি পেট্রোবাংলার জন্য যা করেছেন বলে মনে করছেন, আমরা তা মনে করছি না।’
প্রকিউরমেন্ট বিভাগের উপ ব্যবস্থাপক নাঈমা কামরুন নাহার জিটিসিএলের সিস্টেম লস নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমাদের গ্যাস কোন দিক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে? আমরা তো প্রোডাকশন কোম্পানি থেকে গ্যাস নিয়ে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে দিচ্ছি। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অদক্ষতা, তাদের অব্যবস্থাপনার দায় আমরা কেন নেবো? আমরা সঞ্চালন করি। আমাদের কোনো সিস্টেম লস নেই। হাইপ্রেশার লাইনের কোনো সিস্টেম লস নেই। এই অবৈধ সিস্টেম লস অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত বাতিল না হবে, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সামান্য বিষয়টা বোঝার মতো আইকিউ আমাদের চেয়ারম্যানের নেই। আমরা অদক্ষ চেয়ারম্যানকে চাই না। আমরা এমন একজনকে চাই, যিনি পেট্রো সেক্টর তথা পুরো বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে।’
জিটিসিএল কর্মকারী ইউনিয়নের সভাপতি লিয়াকত আলী বিভিন্ন বৈষম্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। আমরা অবিলম্বে স্বৈরাচারের দোসর, জিটিসিএল ধ্বংসকারী, মিথ্যাচারী এবং ক্ষমতার অপব্যহরাকারী পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।’
ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক আইনুল কবির তার বক্তব্যে সব জিএমের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে হবে। এই প্রাণের প্রতিষ্ঠান অনেক ত্যাগ, অনেক শ্রম, অনেক সাধনা করে জিটিসিএল দেশব্যাপী জাতীয় গ্যাস গ্রিট প্রতিষ্ঠা করেছে। যে অন্যায় সিস্টেম লস জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’
এনএস/ইএ/জিকেএস