জাতিসংঘের অধিবেশন
রোহিঙ্গা সংকট ও ৫০ বছরপূর্তি নিয়ে বিশেষ আয়োজন করবে বাংলাদেশ
অনেকটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবে বাংলাদেশ। আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এবারের অধিবেশনে তার নেতৃত্বে ৫৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন।
এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করবে বাংলাদেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে এক ধরনের সমস্যায় আমরা ভুগছি। দাতা সংস্থা আগে সহায়তা দিলেও সেটি অনেকটা কমে গেছে। তাই তাদের জন্য যে ব্যয় হয় সেটি বড় চাপ হয়ে যাচ্ছে সরকারের জন্য। এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার সুযোগ নেই, সেটিও জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি তিনদিন অবস্থান করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন।
কূটনীতিকরা বলছেন, বিশেষ সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করছে। সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তাই যুক্তরাষ্ট্রে এ সফর অনেক গুরুত্ব বহন করছে। আর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম সফর হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ রয়েছে সবার। তবে প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
- আরও পড়ুন
জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদীর দেখা হচ্ছে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জাতিসংঘে যাচ্ছেন ইউনূসের নেতৃত্বে ৫৭ জনের প্রতিনিধিদল
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবারই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের রিসিপশনের আয়োজন করছে। এ রিসিপশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানদের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী; ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হতে পারে।
সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে। আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
এবারের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বেশ কয়েকটি আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরমধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামিট অব দ্য ফিউচার। ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই আয়োজনে বিশ্ব নেতারা প্যাক্ট অব দ্য ফিউচার শীর্ষক একটি ভবিষ্যৎমুখী ঘোষণাপত্র গ্রহণ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর ওপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সব কটিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নতুন একটি পরিস্থিতির মধ্যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তাই এ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের এজেন্ডায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি বিষয় বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সব প্রাসঙ্গিক ইভেন্টে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবো। রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টও আয়োজন করা হবে। এ ধরনের বেশ কিছু কর্মসূচি আমাদের রয়েছে।
আইএইচআর/এমএইচআর/জেআইএম