জাতিসংঘে যাচ্ছেন ইউনূসের নেতৃত্বে ৫৭ জনের প্রতিনিধিদল
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৫৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল যোগদান করবেন। ড. ইউনূস ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ কথা জানান।
তিনি জানান, আগের সরকার কেন বড় ডেলিগেশন নিয়ে যেতো সেটি আমি জাস্টিফাই করতে পারবো না, আমি তখন আপনাদের মতো সাধারণ মানুষ ছিলাম। সুতরাং আমি জানি না। তবে বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবশ্যই ব্যয় সংকোচ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো খরচ করা যাবে না। স্বাভাবিক সময়ে ৭৩তম এবং ৭৪তম অধিবেশনে এ সংখ্যা ছিল ৩৪৪ ও ৩৩৫। এরপর করোনার জন্য ৭৫তম অধিবেশন হয়েছে ভার্চুয়ালি। কোভিডের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৬তম অধিবেশনে ১০৮ জন, ৭৭তম অধিবেশনে ১৩৮ জন এবং কোভিড পরবর্তী যখন ব্যয় সংকোচনের কথা বলা হচ্ছিল তখনও ৭৮তম অধিবেশনে ১৪৬ জন গেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এবার নিরাপত্তা এবং প্রেসসহ সব মিলিয়ে কিছু বিষয়ে আমরা সংকোচন করতে পারিনি, কারণ নিরাপত্তা তো সবার উপরে। সবমিলিয়ে এবার ৫৭ জন যাচ্ছেন। তারমধ্যে বড় অংশ নিরাপত্তা এবং প্রেস। আমি এতোটুকু বলতে পারি একেবারে নিতান্ত প্রয়োজন যারা তারাই যাবেন।
তিনি জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ অভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
তৌহিদ হোসেন জানান, প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ সময়ে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ইতালির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের আলোচনা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যগুলোর উপর যেসব ইভেন্ট আছে, বাংলাদেশ তার সবগুলোতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মনে করে। এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করবে আশা করা যাচ্ছে।
আইএইচআর/এসআইটি/জিকেএস