জাতীয় নাগরিক কমিটি

হাসিনার মতো কাউকে যেন পালাতে না হয়, সেই বন্দোবস্ত করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ দেশের নতুন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তবে তাদের উদ্যোগগুলো রাজনৈতিক মনে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা সংগঠনের নেতারা। তারা দেশের আমূল সংস্কার করবেন, যাতে জাতীয় ঐক্যের তৈরি হয়। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার মতো যেন কাউকে আর পালাতে না হয়, সেই বন্দোবস্তও নাগরিক কমিটি করার উদ্যোগ নেবে।

তাদের ভাষ্য, ‘আমরা রাজনৈতিক দল নই। তবে আমাদের উদ্যোগগুলো অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক। জুলাইয়ে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়, সেজন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ।’

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তারা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিণত হয় সারাদেশের জনগণের মুক্তির আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয় ফ্যাসিস্ট শক্তি। এ আন্দোলনে হাজারের কাছাকাছি মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের এ সাহসী আত্মত্যাগই বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।

সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করছি। কিন্তু এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টের যে, এতদিন পরও আমাদের মধ্যে কোনো ইস্যুতেই জাতীয় ঐক্য নেই। সবকিছু নিয়েই আমরা দ্বিধা-বিভক্ত। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো প্রাথমিক রাষ্ট্রীয় কাজও এখানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। ফলে স্বাধীনতার এতদিন পরও আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি।

‘পাঁচ বছর পর পর ক্ষমতা হস্তান্তর হবে কী প্রক্রিয়ায়, তা নিয়েই এতদিনে কোনো ঐক্যে পৌঁছানো যায়নি। নাগরিক কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো- জনগণসহ সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির এ মুখপাত্র বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার এখনো বিলোপ হয়নি। ফ্যাসিবাদ একটি সরকার নয়। এটি একটি ব্যবস্থা, যা বিভিন্ন আইন, প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক চর্চার মাধ্যমে টিকে থাকে। আমরা সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরিতে কাজ করবে নাগরিক কমিটি। এমন একটি বন্দোবস্ত আমরা তৈরি করতে চাই, যেন সামনের দিনে কোনো সরকারপ্রধানকে শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যেতে না হয়।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি তরুণদের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম। সামনের দিনের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তরুণসহ সব নাগরিককে এ প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করতে চাই। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে জনগণকে আমরা সম্পৃক্ত করতে চাই। মানুষের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তাকে বাস্তবতায় পরিণত করতে চাই আমরা।

শহীদদের তালিকা এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত করতে না পারাটা অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে সামান্তা বলেন, ফ্যাসিস্ট পতনের এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো শহীদদের নামের তালিকা সম্পূর্ণ করেনি সরকার। এ বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়। আহত অনেকে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। প্রতিদিনই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর আসছে। সরকারের অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সব শহীদ ও আহতের নামের তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। আহতদের জন্য সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্ববান জানান তিনি।

আত্মপ্রকাশের পর প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা

এদিকে, সংবাদ সম্মেলন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঘোষিত ৮ দফা বাস্তবায়নে সারাদেশে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করবেন আহ্বায়করা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ৮ দফা—

১. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে প্রতিফলিত হওয়া সামষ্টিক অভিপ্রায় ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রাখা।

২. ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা।

৩. রাষ্ট্রের জরুরি সংস্কার ও পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ও জবাবদিহির পরিসর তৈরি করা।

৪. বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময় ও গণমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনতাকে সংহত করার লক্ষ্যে কাজ করা।

৫. দেশের সর্বস্তরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংহত করে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত করে রাখার লক্ষ্যে ফ্যাসিবাদী কাঠামো ও শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা।

৬. জনস্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা।

৭. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণী প্রস্তাবনা তৈরি ও সেটা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৮. গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা।

গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৫৬ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। সদস্যসচিব করা হয় ডাকসুর সাবেক সমাজেসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে। এ কমিটিতে মুখপাত্র হিসেবে রয়েছেন সামান্তা শারমিন।

এএএইচ/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।