শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবায় আমূল পরিবর্তন, খুশি যাত্রীরা

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০২:৩০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বেড়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা

‘আগে ফ্লাইট থেকে বিমানবন্দরে নেমে ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো। এরপর লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। কিন্তু এখন দেখি বিমানবন্দরের চিত্র পুরোই বদলে গেছে। ফ্লাইট অবতরণের অল্প সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হচ্ছে। বেল্টে যাওয়ার আগেই লাগেজ পৌঁছে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফ্রিতে টেলিফোনে কথা বলতে পারছি। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য ওয়াইফাই সংযোগও ফ্রি। আর বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই প্রবাসীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছেন।’

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ এর সামনে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন সৌদি প্রবাসী আক্তার হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে।

আক্তার হোসেন বলেন, ‘চাকরির সুবাদে দীর্ঘ ১০ বছর জেদ্দায় থাকি। প্রতি বছরই ছুটিতে দেশে আসি। সব সময়ই লাগেজ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেক সময় লাগেজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মালামাল চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এবার যাত্রীদের তেমন কোনো ভোগান্তি নেই। এমনকি ইমিগ্রেশন পুলিশের যেসব সদস্য আগে গোমড়া মুখ করে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতেন, এখন তাদের ব্যবহার খুবই আন্তরিক।’

শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবায় আমূল পরিবর্তন, খুশি যাত্রীরা

বেলা ১১টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন গাজীপুরের সাইফুল আলম। তিনিও বিমানবন্দরের নাগরিক সেবায় সন্তুষ্টির কথা জানান।

সাইফুল আলম বলেন, ‘দেশে ফিরে অনেক প্রবাসীর কাছে সিম থাকে না। পরিবারের কেউ বিমানবন্দরে এলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা খুঁজে বের করতে কষ্ট হতো। এখন দেখলাম, বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা স্থানে টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ টেলিফোন ব্যবহার না জানলে সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করছেন। এছাড়া ফ্রি ওয়াইফাই আছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এমন আন্তরিকতা আগে দেখেনি কেউ।’

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের রদবদল হয়। মূলত তখন থেকেই বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়তে থাকে। এখন এই ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।

বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা স্থানে টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ টেলিফোন ব্যবহার না জানলে সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করছেন। এছাড়া ফ্রি ওয়াইফাই আছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এমন আন্তরিকতা আগে দেখেনি কেউ।-প্রবাসী সাইফুল আলম

জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত আগস্ট থেকে বিমানবন্দরে যাত্রীসেবায় যে পরিবর্তন লেগেছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। সে জন্য প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দর পরির্দশন করি। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলি, যাতে তারা যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেন।’

শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবায় আমূল পরিবর্তন, খুশি যাত্রীরা

তিনি বলেন, ‘এছাড়া সবাইকে বলেছি, যাতে তারা যাত্রীদের তথা প্রবাসীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। একদিন আমি পরিচয় গোপন রেখে যাত্রীদের সঙ্গে ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহ, চেকিং কার্যক্রম পরির্দশন করেছি। দেখেছি, বিমানবন্দরের সেবায় প্রায় সব যাত্রী সন্তুষ্ট। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা।’

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন ফেনীর মাহবুব আলম। ফ্লাইট থেকে নেমে দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বের হতে তার সময় লেগেছে ৩০ মিনিট। আলাপকালে মাহবুব আলম বলেন, ‘সাধারণত প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহসহ অন্য ফর্মালিটি মেনে বের হতে গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আজ কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্টে আসার পরপরই লাগেজ পেয়েছি। আবার বিমানবন্দরের ভেতর থাকা ফ্রি টেলিফোন দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছি।’

শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কল সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। এখন দেশের যে কেউ কল সেন্টারে (০৯৬১৪-০১৩৬০০) যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারছেন। এছাড়া যাত্রীসেবা বাড়াতে একই দিন একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কল সেন্টারে বিমানবন্দর-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানা যায়।

আর পোর্টালে কাস্টমস ডিউটি অফিসারদের নামের তালিকা, ইমিগ্রেশন পুলিশের সেবা, নিরাপত্তা সেবা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার তথ্য, হুইলচেয়ার সেবা, ব্যাংকিং ও মানি এক্সচেঞ্জ সেবা, জরুরি প্রয়োজনে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত সব কর্মকর্তার ফোন নম্বর, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা, কোন উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার কোন উড়োজাহাজ কখন ছেড়ে যাবে, কখন এসে পৌঁছাবে তা ঘরে বসেই জানতে পারছেন যাত্রীরা। তবে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে এসব সেবার প্রচার বেড়েছে। আর বিমানবন্দরে কর্মরত সবার ব্যবহারেও পরিবর্তন ঘটেছে।

এছাড়া সবাইকে বলেছি, যাতে তারা যাত্রীদের তথা প্রবাসীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। একদিন আমি পরিচয় গোপন রেখে যাত্রীদের সঙ্গে ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহ, চেকিং কার্যক্রম পরির্দশন করেছি। দেখেছি, বিমানবন্দরের সেবায় প্রায় সব যাত্রী সন্তুষ্ট।- বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া

প্রবাসীদের স্যার-ম্যাডাম সম্বোধন চান বেবিচক কর্মচারীরা

গত ১১ আগস্ট ১২ দফা দাবিতে প্রধান কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মচারী ফোরাম। তখন এসব দাবি আদায়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল, বিমানবন্দরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাসহ (প্রবাসী শ্রমিক) যাত্রী সাধারণকে বিমানবন্দরে কর্মরত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আদেশ জারি ও বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে সেবা কার্যক্রম অধিকতর মানবীয় করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছে তারা।

শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবায় আমূল পরিবর্তন, খুশি যাত্রীরা

এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার লোকেরা যাতে যাত্রীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করে, এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের ‘স্যার বা ম্যাডাম’ বলতেও বলা হয়েছে। কারণ, তাদের রেমিট্যান্সের ওপরই আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে টিকে আছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের ব্যবহার নিয়ে বেশি আপত্তি ছিল। তখন বিষয়টি ইমিগ্রেশন পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হলে তারা জানান, বিমানবন্দরে তাদের তিন শিফটে কাজ চলে। একেকজনকে ৮ ঘণ্টা করে টানা কাজ করা লাগে। চাইলেও কাজের চাপে হাসি মুখে কথা বলতে পারেন না অনেকে। তাই ইমিগ্রেশন পুলিশকে আরেকটি শিফট বাড়াতে বলেছি। তারা সে অনুযায়ী আরেক শিফট বাড়াচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে যাত্রীসেবা আরও উন্নত হবে।’

এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বেবিচক।

এমএমএ/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।