‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৪ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিল, ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট অ্যাক্ট সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নেতৃত্বাধীন ৩৯টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের জোট ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট-বাংলাদেশ’।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলার নীতি/পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা এবং এদের বাস্তবায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে কয়েকটি জাতীয় নীতি-পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাব উস্থাপন করা হয়। নাগরিক সমাজের পক্ষে থেকে দলীয় রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তৈরি অগণতান্ত্রিক ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার নমনীয়করণ এবং স্থানভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকি নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নে দাবি উপস্থাপন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী ও ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’ এর সমন্বয়কারী মো. শামছুদ্দোহা তাদের দাবিগুলোর পক্ষে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করনে। তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিল ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড- বিসিসিটিএফ’ ও এর আইনি কাঠামো ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট অ্যাক্ট’- এ দলীয় সরকার, আমলাতন্ত্র ও পেশাজীবীদের আধিপত্যের কারণে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছে।

শামছুদ্দোহা বলেন, বিসিসিটিএফ পরিচালনায় ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ডের ১৪ জনই মন্ত্রী, ১ জন সচিব এবং ২ জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। দুইজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সরকার দলীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণে বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন, যারা প্রকারান্তরে দলীয় সরকারেরই অংশ। ফান্ডের অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিসিসিটিএফ ও এর আইনি কাঠামোর আমূল সংস্কারের দাবি করেন তিনি।

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানিয়ে শামছুদ্দোহা বলেন, বিগত সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছিল। সাবেক সরকারের এস ডি জি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারীর একক তত্ত্বাবধানে বিদেশি পরামর্শকদের দ্বারা এবং কোনো ধরনের অংশীজন আলোচনা ছাড়াই এ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়। এটি দেশের অন্যান্য পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এবং সর্বতোভাবেই বিদেশি ঋণনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে এটি দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক না হয়ে দেশকে আরো দেনাগ্রস্ত করবে। পরিকল্পনাটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যেগুলোর কোনোটিরই সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে অগণতান্ত্রিক উপায়ে তৈরি ও বিদেশি ঋণনির্ভর এ পরিকল্পনাটি বাতিল ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও এর জাতীয় নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এখনো গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জনবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রণীত নীতি-পরিকল্পনা ও দুর্নীতির সুযোগ চলমান রেখে এবং গতানুগতিক ধারার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনোভাবেই সমতা ও ন্যায্যতা-ভিত্তিক জলবায়ু সহনীয়তা অর্জন করা যাবে না।

সুশীলনের উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ফারুক বলেন, আমরা দেখেছি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়সাধন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, দুর্নীতি মোকাবিলার কৌশল, অধিকতর ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীতে অর্থায়নের ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। আমরা মনে করি, এরই মধ্যে প্রণীত জলবায়ু নীতি-পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার প্রয়োজন।

এমএমএ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।